কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আধিপত্য ধরে রাখতে শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছে সক্রিয় তিন জঙ্গি সংগঠন। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), ইসলামী মাহাজ ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এ তিন জঙ্গি সংগঠন এরই মধ্যে ক্যাম্পের ২ হাজারের অধিক মাদরাসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষা বোর্ডে যুক্ত না হলেই চালায় হামলা।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতর জঙ্গিদের শিক্ষা বোর্ডের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক সূত্র বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে ওঠা মাদরাসাগুলোয় একসময় একক আধিপত্য ছিল জঙ্গি সংগঠন ইসলামী মাহাজের। মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে রোহিঙ্গা আলেমসমাজে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ফলে ক্যাম্পে নিজেদের অবস্থান অনেকটা সুসংহত হতে থাকে। গত কয়েক মাসে ইসলামী মাহাজের একক আধিপত্যে ভাগ বসায় সক্রিয় আরও দুই জঙ্গি সংগঠন আরসা ও আরএসও। তারাও নিজেদের পৃথক একটি শিক্ষা বোর্ড গঠন করে। ক্যাম্পে থাকা মাদরাসাগুলোকে এর সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ধর্মীয়ভাবে খুবই আবেগপ্রবণ। তারা আলেমদের খুবই বিশ্বাস করে। আলেমদের দেওয়া বক্তব্য মেনে চলে। তাই ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে সংগঠন বেগবান করতে মাদরাসাগুলোর দিকে নজর দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। শিক্ষা বোর্ডগুলো মূলত মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ করতেই গঠন করা হয়েছে। কথিত এসব শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে তারা সহজেই মাদরাসা ও আলেমসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় প্রতিটি ব্লকেই রয়েছে ছোট-বড় মাদরাসা। এসব মাদরাসায় লেখাপড়া করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। এসব মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতেই কথিত শিক্ষা বোর্ড গঠন করেছে ক্যাম্প সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আরসার রয়েছে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বুরমা’। আরসাপ্রধান আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ এ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। এ বোর্ডের অধীনে রয়েছে ছোট-বড় ৭ শতাধিক মাদরাসা। এ শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক মাদরাসাশিক্ষককে মাসে আরসার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্য জঙ্গি সংগঠন ইসলামী মাহাজেরও রয়েছে ‘তানজিমুল মাদারিস আরাকান’ নামে নিজস্ব শিক্ষা বোর্ড। এ শিক্ষা বোর্ডের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন মুফতি আসেম আবদুল্লাহ। এ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৬ শতাধিক মাদরাসা রয়েছে। তারাও অধিভুক্ত মাদরাসার শিক্ষকদের মাসিক বেতন দেয়। আরেক জঙ্গি সংগঠন আরএসওর রয়েছে ‘ওয়ামি তালিমে আরাকান’ নামে নিজস্ব শিক্ষা বোর্ড। তাদের অধীনে কয়েক শ মাদরাসা রয়েছে। রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর পরিচালিত মাদরাসাগুলোয় আরবির পাশাপাশি বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে বাংলা শেখানো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৈরি বোর্ডে থাকা না থাকা নিয়ে মাদরাসায় হামলা নিত্য ঘটনা। একাধিক খুনও ঘটেছে। গত মার্চে ওয়ামির নেতৃত্বে থাকা ৫০টি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছরের অক্টোবরে বালুখালী ক্যাম্পে দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল ইসলামিয়া মাদরাসায় হামলার নেপথ্যে অন্যতম কারণ ছিল আরসার বোর্ডে যোগ না দেওয়া।