ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কে হবেন বিজেপি প্রার্থী? তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশটির রাজনীতিতে।
ওই আসনে তুমুল জনপ্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনের দাঁড় করানোর মতো প্রার্থী পাচ্ছে না বিজেপি-এমন খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, এবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে উপনির্বাচনে অংশ নিতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর তাই এখন ভবানীপুরে উপনির্বাচন। সেখানে পদত্যাগ করেছেন বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ওই আসনে সেখানে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এখানে কাকে প্রার্থী করবে তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে জোর আলোচনা চলছে। বিভ্রান্তিও স্পষ্ট হচ্ছে। ভোটে যাবে, না আইনি পথে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করবে তা নিয়েও দোটানায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবারই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, যে কোনও মুহূর্তে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারে গেরুয়া শিবির। এরই মধ্যে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে এবার ভবানীপুরে বিজেপি-র হয়ে ভোটে লড়বেন হাইকোর্টের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। যদিও এই জল্পনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ গেরুয়া শিবিরের কেউ।
কে এই প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল?
২০১৪ সালে বাবুল সুপ্রিয়র আইনি পরামর্শদাতা প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তার এই যোগদান। তিনি বিজেপি যুব মোর্চার গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে ছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে এন্টালি থেকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু, সেখানে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহার কাছে হেরে যান তিনি।
তিনিই কি ভবানীপুরে বিজেপির প্রার্থী? এই বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা জানান, দলের তরফ থেকে আমার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। দল জানতে চেয়েছে আমি ভবানীপুর থেকে নির্বাচনে লড়াই করতে চাই কিনা। অনেক নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি এখনও জানি না কে প্রার্থী হতে চলেছে। বিগত সময়ে তাঁকে সমর্থনের জন্য দলীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদও জানান প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি দল ভবানীপুরের প্রার্থী করে সেক্ষেত্রে আমি লড়াই করব। এটা ন্যায় বনাম অন্যায়ের লড়াই। আশা করি সেক্ষেত্রে মানুষ আমাকে সমর্থন করবে। ভোট পরবর্তী হিংসার বিরুদ্ধে এটা আমাদের লড়াই ক্ষেত্র।’
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভবানীপুরের সকলকে অনুরোধ করব বিজেপিকে ভোট দিতে। এতে দেশ তথা বাংলার উন্নতি হবে।’
এদিকে প্রিয়াঙ্কা ছাড়াও মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিজেপির প্রাক্তন কাউন্সিলর তিস্তা দে বিশ্বাস, কাঁকুড়গাছিতে নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে বিজেপি শিবিরে, জল্পনা এমনটাই।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, একুশের নির্বাচনে ভবানীপুরে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। তবে শোচনীয় পরাজয় হয় তাঁর। অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বোলপুরে বিজেপি প্রার্থী। তিনিও নির্বাচনে হেরেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন দীনেশ ত্রিবেদী। তাকেই বিজেপি ময়দানে নামাতে পারে বলে জোর খবর। এমনকি একুশের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তথাগত রায়। তবে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। তাই তথাগতর মতো পুরনো বিজেপি নেতাকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে গেরুয়া শিবির। এমন সময় এই টুইট অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্বের।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, যে কোনও মুহূর্তে ভবানীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রামেও আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। কিন্তু, তাতে লাভ কিছুই হয়নি।’
এদিকে, ভবানীপুর কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন, নজর এখন সেই দিকেই।