রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর হামলার জের ধরে শনিবার মধ্যরাত থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। রাতভর উত্তপ্ত পরিস্থিতি, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠক হয়। কিন্তু সবকিছুর পরেও রাতভর উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। একই পরিস্থিতি চলে রোববার সারাদিন।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। দিনভর কলেজ ক্যাম্পাস দখলে রাখে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপ। সন্ধ্যা ছয়টায় সংবাদ সম্মেলন করার সময় হামলা করা হয় তামান্না জেসমিন রিভার ওপর। এসময় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ও হামলায় অন্তত ১৫জন আহত হন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার না হলে সুইসাইড করবো: জান্নাতুল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার না হলে সুইসাইড করবো: জান্নাতুল
এর আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একচেটিয়া চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার অভিযোগ তোলে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। গত আগস্ট মাসে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হেনস্তার অডিও ফাঁস নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সর্বশেষ শনিবার মধ্যরাতে কলেজ শাখার সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকরা শনিবার রাতে তাকে শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
শহীদ বঙ্গমাতা ছাত্রী নিবাসের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জান্নাতুল ফেরদৌস গত ২২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রীভা ও রাজিয়ার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। এর জেরে শনিবার রাত ১১টার দিকে জান্নাতকে ছাত্রীনিবাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন রীভা ও রাজিয়ার অনুসারীরা। পরে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘হেনস্তা’ করা হয়। এ নিয়ে হট্টগোলের পর জান্নাতকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জান্নাত জানান, আমি তাদের অপকর্ম নিয়ে মিডিয়ায় কথায় বলায় আমাকে হল থেকে বেরিয়ে যেতে হুমকি দিয়েছে। পরে রীভা ও রাজিয়ার অনুসারীরা আমাকে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন ও মারধর করেছে। এমনকি তারা আমার ব্যক্তিগত ছবিও তুলে রেখেছে। এ বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে রীভা বলেন, ইডেন কলেজ ও কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে সে (জান্নাত) বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি, লাইভে এসে বিতর্কিত বক্তব্য এবং মিডিয়াতে অপপ্রচার চালিয়েছে, যা কোনোভাবেই ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। এর ফলেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামে। এখানে আমরা ছাত্রলীগ সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
বিকেলের সংবাদ সম্মেলনেই হামলা
ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশটি সারাদিন কলেজ ক্যাম্পাসে শো-ডাউন দিতে থাকে এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করতে যায় সভাপতি পক্ষের অংশটি। তখন সংবাদ সম্মেলনস্থল দখল করে নেয় বিদ্রোহী অংশটি। পরবর্তীতে কলেজের পুকুর পাড়ে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন তামান্না জেসমিন রিভা৷ সেখানে সংবাদ সম্মেলন শুরুর ৫ মিনিট পর বিদ্রোহী অংশটি রিভার ওপর হামলা করে।
অবরুদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা
এদিকে সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। বিকেল ৫টা থেকে বন্ধ করে রাখা হয় ক্যাম্পাসের গেট। ফলে বাইরে ইডেন কলেজের ভেতরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং বাইরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা পর কলেজের গেট খুলে দিলে তারা নিজ গন্তব্যে যেতে থাকে। তামান্না জেসমিন রিভাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার পর ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশ উল্লাস প্রকাশ করেন।
পরে বিদ্রোহী অংশের পক্ষ থেকে সহ-সভাপতি সানজিদা পারভীন বলেন, রিভা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বার বার হামলা করেছে, অত্যাচার করেছে। আমরা আমাদের অভিভাবক ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ কোন ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমরা এতদিন আমাদের অভিভাবকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমাদের হাতে আর কোন উপায় ছিলো না।