সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নিহতের বাবা মোঃ হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম এ তথ্য জানায়। আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
সোমবার নিহত রহমানের ছোট বোনের স্বামী সৌদি প্রবাসী মোঃ ইউছুপ মোবাইল ফোনে জানায়, শালার লাশ দেশে পাঠানো এবং কিভাবে সে মারা গেছে তা জানার জন্য কয়েক বার সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন তিনি। কিন্ত দূতাবাস থেকে মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ভালো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে তিনি সৌদি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে রহমানের মৃত্যুর প্রতিবেদন বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। লাশ বর্তমানে সৌদি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এখন যা জানাবে সব বাংলাদেশ দূতাবাস জানাবে। এদিন দুপুরে সৌদি দূতাবাসের একটি নাম্বারে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে নিহত রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে মা বাবা আহজারি করছেন। তারা যে কোন ভাবে ছেলের লাশ দেশে আনতে চান এবং ছেলেকে হত্যার বিচার চান। সেজন্য তারা সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সরকারের সহযোগিতা চান।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, গত ১ মে সৌদি আরবের পুলিশ রহমানের রক্তাক্ত লাশ তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করলেও পরিবার ৫ দিন পর সে খবর জানতে পারে পরিবার। সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি চাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। তবে উক্ত ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানান নিহতের পরিবার।
জানাজানি হলে গত ১০ মে ছেলেকে হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে সৌদি সরকারের নিকট লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন আবদুর রহমানের বাবা মোঃ হানিফ। ১৪ মে তারিখে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তাকে একটি প্রাপ্তি স্বীকার দিয়েছে। এরপর প্রশাসন বা অন্য কোন পক্ষ থেকে আর কোন তথ্য কেউ জানতে চায়নি বলে জানান, মোঃ হানিফ।
নিহতের মা লাকী বেগম জানায়, সংসারে অভাব অনটনের কারণে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশের এক আত্মীয়র মাধ্যমে ২০১৯ ছেলেকে সৌদি পাঠান। কিন্ত সৌদি গিয়ে জানতে পারে তার চাকুরী মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তারপক্ষে মোটে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি ২ বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোন ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো। পরে অতি নির্যাতনে সে সেখান থেকে একদিন তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে। কিন্ত এখানে গিয়েও সে জানতে পারে তার কাজ মরুভূমিতে ছাগলের খামারের শ্রমিক। নতুন কর্মক্ষেত্রে সুদানি সহকর্মীদের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হতো। পরে ১ মে তারিখে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছে বাবা-মা। অন্যদিকে ছেলের লাশ দেশে আনতে আহাজারি করছে অসহায় পরিবার।