জ্বালানি তেলের দাম লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমানোর সুফল কি সাধারণ মানুষ পাবে। যেখানে এক লাফে ৫২ শতাংশ তেলের দাম বাড়ানোর পর সব ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। পরিবহন, কৃষিতে চরম পরিবর্তন আসে। এভাবে দাম বাড়ানো একেভারেই অস্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না। হঠাৎ করে বৃদ্ধি করার ফলে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে। জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাস, ট্রাক, লঞ্চ ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় ১৬ শতাংশ এবং দূরপাল্লার বাসে ২২ শতাংশ বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের মানুষের ব্যয় হু হু করে বেড়েছে। এতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা। এখন লিটারে ৫ টাকা কমার ফলে বাসের ভাড়া কি কমবে? পণ্য পরিবহন ভাড়া কি কমবে? পণ্যের দাম কি কমে যাবে? অনেকে বলছেন, লিটারে ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত লোকদেখানো মাত্র। এর কোনো সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চাহিদা কমছে বলে নিম্নমুখী তেলের দাম। বলা হয়েছে, পাশের দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়। ভারত গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রোল ১০৬ দশমিক ৩ রুপি নির্ধারণ করেছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪ দশমিক ০৯ টাকা এবং ১৩০ দশমিক ৪২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৩৪ দশমিক ৯ এবং পেট্রোল লিটারপ্রতি ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরকারকে হয়তো দাম বাড়াতে হতো। কিন্তু একবারে এত বেশি বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বহুমাত্রিক। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেমন বাড়ে তেমনি সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপরও এর প্রভাব পড়ে। এমনকি ব্যয় বেড়েছে কৃষি পণ্য উৎপাদনেও। কারণ ডিজেলের ব্যবহার সেখানে অপরিহার্য। ফলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই প্রভাব কৃষিকাজেও পড়েছে দারুণভাবে। বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামা, অস্বাভাবিক। এটি আসলে কতদিন চলবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে এখানে কমার প্রবণতা দেখা যায় না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম যতই বাড়ুক বা কমুক, আমরা ন্যায্যমূল্যের অনেক বেশি দাম পরিশোধ করি। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমাদের আমদানি বাজারে প্রতিযোগিতা কম হওয়ায় আমরা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমদানিকারকদের কারসাজি হোক, ডলারের দামবৃদ্ধি হোক, আর আমাদের মজুত করার অক্ষমতা হোক, পরিণাম ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় হাঁপিয়ে উঠছে জনগণ। মানুষের ক্ষয়ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচবেন- সরকারকে পথ বের করতে হবে।