ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে সুইজারল্যান্ড থেকে কেনা যুদ্ধসামগ্রী ইউক্রেনে পাঠাতে চায় জার্মানি। কিন্তু আমদানির চুক্তি অনুযায়ী অন্য দেশে পাঠানোর আগে সুইজারল্যান্ডের অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতিই পাচ্ছে না জার্মানি। ইতোমধ্যে দু’বার অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। দু’বারই অসম্মতি জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র রফতানি বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (এসইসিও বা সেকো)।
সেকোর মিডিয়া মুখপাত্র মিশায়েল ভ্যুথরিশ জানান, নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের যুদ্ধসামগ্রী সংক্রান্ত আইনের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে সুইজারল্যান্ডের পক্ষে অনুমতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
যে দেশে অস্ত্রগুলো পাঠানো হবে সে দেশ যাতে এগুলো আবার অন্য কোনো দেশে না পাঠায় তা নিশ্চিত করতে আগাম নন-রিএক্সপোর্ট ডিক্লারেশন, অর্থাৎ প্রাপ্ত অস্ত্র অন্য দেশে রফতানি না করার অঙ্গীকারনামা নেয় সুইজারল্যান্ড। এমন অঙ্গীকারনামা না পেলে তারা অস্ত্র রফতানি করে না। এই আইনটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।
ভ্যুথরিশের মতে, ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তাই সুইজারল্যান্ডের তৈরি করা অস্ত্র আগে সরবরাহ করা হলেও পুনরায় রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জার্মান সেনাবাহিনীকে সেই অস্ত্র সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর অনুমতি দেয়া আইন অনুযায়ী অসম্ভব।
তবে সুইস সরকারের এ অবস্থান ইউরোপের অন্যান্য দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছে। দেশেও সরকারের এই নীতিকে সবাই সমর্থন জানাচ্ছে না। মধ্য-ডানপন্থী দল সেন্টার পার্টির প্রেসিডেন্ট গেরহার্ড প্ফিস্টার মনে করেন, সরকারের উচিত সংবিধান অনুসরণ করে পুনরায় রফতানিবিরোধী বিধানকে পাশ কাটিয়ে জার্মানিকে অনুমতি দিয়ে দেয়া। তিনি মনে করেন, এর ফলে ইউরোপের একটি গণতান্ত্রিক দেশকে সহায়তা করা হবে এবং তাতে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের এক অংশ আবার ইয়েমেন যুদ্ধে হাউছিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহের প্রসঙ্গ টেনে সুইজারল্যান্ডের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে সৌদি আরবকে অস্ত্র দিলেও ইউক্রেনের বেলায় নিরপেক্ষ থাকা এক ধরনের স্ববিরোধিতা।
তবে জেনেভা সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির গ্লোবাল অ্যান্ড ইমার্জিং রিস্কসের প্রধান জঁ-মার্ক রিকলি বলেন, ‘দুটি স্বতন্ত্র দেশের মধ্যে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের এই নিরপেক্ষতার বিষয়টি প্রযোজ্য। কিন্তু ইয়েমেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়, কারণ সেখানে যুদ্ধের উৎপত্তিটা অভ্যন্তরীণ। ইয়েমেন সরকার সহায়তা চাওয়ার কারণেই সৌদি আরব হাউছিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।’
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) বেশ কিছু দেশ সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের ওপর বাড়ছে আরো ন্যাটো-ঘনিষ্ঠ হওয়ার চাপ।