সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার আগে ও পরে তার ঘনিষ্ঠজনদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। ইসরাইলভিত্তিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে এই নজরদারি চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতার ও তার বাগদত্তা খাদিজা চেঙ্গিসের ফোনে আড়ি পাতা হয়। খাসোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দুই তুর্কি কর্মকর্তার ফোনেও এভাবে আড়ি পাতা হয়। খাসোগির বাগদত্তা খাদিজা চেঙ্গিসের ফোনও ছিল লক্ষ্যবস্ত। খাসোগিকে হত্যার পর দিনে পাঁচবার তার ফোনে নজরদারি করা হতো। খাসোগির মৃত্যুর পর পেগাসাস ব্যবহার করেন এমন এক ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় খাদিজার মোবাইল। তার ফোনটি ছিল আইফোন। খাসোগিকে হত্যার মাত্র চার দিনের মাথায় ফোনটি হ্যাক করা সম্ভব হয়। কিন্তু এটা জানা সম্ভব হয়নি, তার মোবাইল থেকে কোন ধরনের তথ্য চুরি করা হয়েছে।
ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ পেগাসাস নামে এই স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ঢুকে ব্যবহারকারীর মেসেজ, ছবি, ইমেইল পাচার করতে যেমন সক্ষম, তেমনি কল রেকর্ড এবং গোপনে মাইক্রোফোন চালুও রাখতে পারে। প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাতে সম্প্রতি একটি এ সংক্রান্ত একটি ডাটাবেস পৌঁছেছে, যেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সৌদি রাজ পরিবারের সমালোচক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। একারণেই তিনি দেশটি থেকে নির্বাসিত ছিলেন। খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবরে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে জামাল খাসোগি ওই দূতাবাসে যান। এর ১৮ দিন পর সৌদি আরব জানায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে প্রাণ হারিয়েছেন খাসোগি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলছে, সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন বলে তাদের ধারণা। তবে সৌদি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।