দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য সম্প্রতি তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্যাকেজের আওতায় ঈদের আগে ১৭ লাখ ২৪ হাজার দিন মুজুর, পরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে এটি শহরাঞ্চলে এবং ওএমএস গ্রামাঞ্চলে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য ১৩ জুলাই সরকার নতুন ৩২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪ লাখ ৩৭ হাজার দিন মুজুর, ২ লাখ ৩৫ হাজার পরিবহন শ্রমিক এবং প্রায় ৫০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ১হাজার ৬০৩ জন গ্যারেজ শ্রমিকের মাঝে ঈদের দু’দিন আগে ২৫০০ টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২৩ জুলাই শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের জন্য এই অর্থ কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
২৫০০ টাকার নগদ সহায়তার দ্বিতীয় ধাপ এটি। এর আগে গেল বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির পর সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ২৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ লাখের তালিকা করা হলেও পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই শেষে কমিয়ে ৩৫ লাখে নামিয়ে আনা হয়।
উপকারভোগীদের মধ্যে রিক্সাচালক, দিন মুজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিক রযেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার সেই তালিকা থেকে ১৭ লাখ ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছে সরকার।
অপরদিকে, সরকার শহরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি (ওএমএস) শুরু করেছে ২৫ জুলাই। যা চলবে ৭ আগস্ট পর্যন্ত।
সারাদেশে কম করে হলেও ৮১৩টি কেন্দ্রে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে এবং সরকার ১৫০ কোটি টাকার ত্রাণ সহায়তা প্যাকেজ বরাদ্দ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেন, সারাদেশে ওএমএস এর মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে ২০ হাজার টন চাল এবং ১৮ টাকা দরে ১৪ হাজার টন ময়দা বিক্রি করবে। সরকার প্রতি কেজি চালে ১৭ টাকা এবং প্রতি কেজি ময়দায় ১০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।
গত বছর অবশ্য ওএমএস এর মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হয়েছিল।
এবিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, কঠোর লকডাউনের কারণে রাজধানী ঢাকায় ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নাজমানারা খানুম আরো বলেন, এবার দেশের প্রতিটি পৌরসভাকে ওএমএম কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে ওএমএস কার্যক্রম শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিল। এবার প্রতিটি পৌরসভা কম হলেও ২টন চাল ও ১ টন ময়দা পাবে।
জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩ এর অনুরোধের ভিত্তিতে সরকার প্রতিটি জেলায় খাদ্য সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকদের ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সংখ্যার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
৩২০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কার্যক্রম চালু করার জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণ করবে।
তারা আরও বলেন, সরকার ৪ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে দেশের পর্যটনখাতের কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ৪ আগস্টের মধ্যে এই অর্থ বিতরণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, এ ধরনের বরাদ্দের জন্য সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল রয়েছে। এছাড়াও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও গাড়ি ক্রয় খরচ অর্ধেক কমিয়ে রয়েছে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা।
সরকার অতি দরিদ্র এবং দরিদ্রদের জন্য তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আমাদের আরও ১০ হাজার কোটি টাকা আছে, প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ করবে।
সূত্র: বাংলানিউজ।