সোমবার , ২ আগস্ট ২০২১ | ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অস্ট্রেলিয়া
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আফ্রিকা
  6. আবহাওয়া
  7. আমেরিকা
  8. আয়ারল্যান্ড
  9. ইউক্রেন
  10. ইউরোপ
  11. ইতালি
  12. কানাডা
  13. খেলাধুলা
  14. গ্রাম বাংলা
  15. চিত্র বিচিত্র

সচেতনতাই বড় প্রতিরোধক

প্রতিবেদক
Probashbd News
আগস্ট ২, ২০২১ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ
সচেতনতাই বড় প্রতিরোধক

Spread the love

ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম

করোনা শব্দটিকে যদি আমরা দুভাগে বিভক্ত করি, তাহলে দাঁড়ায় ‘করো’ এবং ‘না’। আবার শব্দ দুটিকে যদি পাশাপাশি উচ্চারণ করি, তাহলে হয় ‘করো না’; অর্থাৎ উপদেশমূলক কিছু বিধিনিষেধকে বুঝানো হয়, যে শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা ছেলেবেলা থেকেই পরিচিত। শৈশব থেকে বাবা-মা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, চাকরিকালীন অফিসের বস, দাম্পত্য জীবনে জীবনসঙ্গী এবং করোনাকালীন ডাক্তাররা ‘এটা করো না, ওটা করো না’ বলে আমাদের বিভিন্নভাবে সাবধান ও সচেতন করে তুলছেন। এ বিষয়টি যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে ‘করোনা’ শব্দটির সঙ্গে ‘সচেতনতা’ শব্দটির একটি গভীর যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৯ সালে চীনে যখন করোনার আবির্ভাব হয়, তখন আমাদের দেশের কারও কারও মধ্যে এমন অগ্রিম সচেতনতাবোধ দেখা গিয়েছিল যে, করোনা এ দেশে আসামাত্র তারা গৃহে প্রবেশ করবেন; কখনো বাইরে বের হবেন না এবং গৃহে অবস্থানকালেও মাস্ক পরে থাকবেন। এরকম অতি সচেতন ব্যক্তিকেও এবারের ঈদে ভিড়ের মধ্যে ফেরিতে ঠাসাঠাসি করে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।

যা হোক, ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে চীনের আনুমানিক ৪ হাজার ৫০০ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আর বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১৯ হাজারের বেশি মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এ করোনা মহামারিতে, যা চীন থেকে চারগুণেরও বেশি এবং যেখানে চীনের জনসংখ্যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ গুণ। উল্লেখ্য, করোনা মহামারিতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে চতুর্থ। এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ঈদে বাড়ি যাওয়াটা সচেতনতার অভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। করোনা বা কোভিড-১৯ যেহেতু একটি ভাইরাস, সেহেতু এটি বিভিন্ন মাধ্যমে অতিদ্রুত ছড়াতে পারে; আর সচেতনতাই হলো এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রথম অধ্যায়। বাংলাদেশে সচেতনতার কাজটি করোনা মহামারির শুরুতেই শুরু হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দেশের আপামর জনগণকে করোনা মহামারি থেকে বাঁচানোর জন্য কনুই দিয়ে হাঁচি-কাশি আটকানো, মাস্ক পরায় উৎসাহিত করা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো সরাসরি নিজে টেলিভিশনের চ্যানেলে এসে দেখিয়েছেন এবং জনগণকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন, যা বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বিশ্বের কয়টি দেশে নিজ জনগণকে সচেতন করার জন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তা করে দেখিয়েছেন-সে তথ্য আমার জানা নেই। তাছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে মাশরাফিসহ স্বনামধন্য ক্রিকেটার, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এবং তারকারা প্রত্যেকেই নিজস্ব অবস্থান থেকে জনগণকে সচেতন করে তোলার কাজে অংশ নিয়েছেন। মিডিয়ার বাইরে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে পাড়া-মহল্লায় মাইকিংও করতে দেখা যায়। এরপরও এবারের ঈদে বাড়ি ফেরার দৃশ্য দেখে একবারও কি মনে হয়েছে যে, আমরা সচেতন হতে পেরেছি? সচেতনতা মূলত একটি মানসিক ব্যাপার, যা জোরজবরদস্তি করে হয় না। আবার হঠাৎ করে কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সবাই একই সঙ্গে সচেতন হয়ে যাবে, এটিও আশা করা উচিত নয়। এটি এমনই এক মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, যা মূলত দীর্ঘদিনের চর্চার বহিঃপ্রকাশ। যেমন-ডাস্টবিন না থকায় বাসে বসে কিছু খাওয়ার পর প্যাকেট বিংবা পলিথিন ব্যাগটি জানালা দিয়ে রাস্তায় ফেলতেই আমরা অভ্যস্থ। বিলাসবহুল এসি বাসে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও উচ্ছিষ্টটি সিট থেকে উঠে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতেও আমরা অলসতা করি, যার পরিপ্রেক্ষিতে সিটের পেছেনে কিংবা নিচে সেগুলো ফেলে রাখি। জানালা খোলার ব্যবস্থা থাকলে হয়তোবা সেগুলোও রাস্তায়ই ফেলে দিতাম। বস্তুত সচেতনতার ধার কম হওয়ার কারণেই এ ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। আবার এই আমরাই যখন বিদেশে যাই, তখন একটি ছেঁড়া কাগজের টুকরাও হাতে নিয় ঘুরি, যতক্ষণ না ডাস্টবিন পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেটিকে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে অভ্যস্থ হয়ে যাই। ভিনদেশে শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে নিজ দেশের ভাবমূর্তি ভালো রাখার জন্যই এ ধরনের সচেতনতাবোধ পরিলক্ষিত হয়।

এবারের ঈদের মতো গত ঈদে সরকার পরিবহণসহ সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়নি। কিন্তু তাতে মানুষের বাড়ি যাওয়া ব্যাহত হয়নি; বরং অনভিপ্রেত ভয়াবহ কিছু ঘটনা ঘটেছে। যেমন-ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় ফেরিতে প্রতিযোগিতা করে বিভিন্ন দিক দিয়ে উঠতে গিয়ে কিছু মানুষ নদীতে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে; কিংবা ছোট ছোট গাড়িতে করে দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে গিয়ে অনেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বস্তুত আমাদের পারিবারিক বন্ধন কিংবা প্রয়োজন এমন যে-কিছু মানুষ হেঁটে, সাইকেলে, রিকশায়, ভ্যানে কিংবা প্রাইভেট কারে, এমনকি যদি নদীতে ফেরি নাও থাকে; তবুও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সাঁতরিয়ে হলেও তারা বাড়ি যাবেন। এক্ষেত্রে কোনো বাধাই তাদের এ গতি রুদ্ধ করতে পারে না। সম্ভবত এজাতীয় দুর্ঘটনাগুলো এড়াতেই সরকার এবারের ঈদে এক সপ্তাহ লকডাউন শিথিল করেছিল। তবে সচেতনতার ক্ষেত্রে আপসহীন হলে অন্তত এবারের ঈদে আমরা বাড়ি যাওয়া পরিহার করতে পারতাম।

করোনার ভয়াবহতা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব কম নয়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিঃসন্দেহে একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ, খোলা থাকলেই বা কী হতো? সচেতন বাবা-মা হিসাবে নিশ্চয়ই আমরা সন্তানদের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতাম না। কেননা, সন্তানের বেঁচে থাকাটা প্রত্যেক মা-বাবার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যা হোক, পরিস্থিতির শিকার ছেলেমেয়েরা বাসায় আবদ্ধ থাকায় শুধু যে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে তা নয়; বরং তাদের মধ্যে অভ্যাস এবং আচরণগত বেশকিছু পবির্তন এসেছে। যেমন-মোবাইল বা ডিভাইসের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, একাকিত্ববোধ, খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি। এতে তাদের মানসিক অবস্থার কিছু পরিবর্তন যেমন-খিটখিটে মেজাজ কিংবা অতিরিক্ত জেদি হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। বড়দের ওপরও করোনার নেতিবাচক প্রভাব কম নয়। ঘরে বসে থাকতে থাকতে কিছুটা শারীরিক অসুস্থতা, ছোটদের মতো বড়দেরও মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং অতিরিক্ত ডিভাইসনির্ভর হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

এসব সমস্যা আর বাড়তে না দিয়ে বরং এগুলোকে কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধি, পুষ্টিকর ও রসালো খাবার গ্রহণ, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইনডোর গেমসের আয়োজন, বাড়ির এক চিলতে ছাদে হাঁটাহাঁটিসহ হালকা ব্যায়াম এবং ডিভাইসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে পারি। একমাত্র সচেতনতাই এক্ষেত্রে আমাদের আলোর পথ দেখাতে পারে।

করোনার সঙ্গে আমাদের বসবাস দেড় বছরেরও বেশি। এ দেড় বছরে এ দেশে করোনার ব্যাপকতা বেড়েছে বহুগুণ। করোনা মহামারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানতালে আমাদের সচেতনতাবোধ বেড়েছে কি? আবারও সেই চীনাদের উদাহরণই দিতে হচ্ছে। শুধু সচেতনতাবোধের কারণেই ওরা সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে করোনাকে জয় করতে পেরেছিল। করোনাকে ভয় নয়; বরং সচেতনতা দিয়েই একে জয় করতে হবে। নিশ্চয়ই করোনাকে ‘আমরা করব জয় একদিন’। আমার বা আপনার সচেতনতাবোধ যে শুধু আমাকে বা আপনাকেই সুরক্ষিত রাখবে, তা নয়; বরং সুরক্ষা দেবে পুরো জাতিকে।

ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ - প্রবাস

আপনার জন্য নির্বাচিত