তালেবান দখলদারিত্বের শুরুর পর আফগানিস্তানে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যে কোনো ছুতায় নারীদের ওপর শারিরীক এবং যৌন নির্যাতন করছে তালেবান জঙ্গিরা। দেশটির নাগরিকরা যে কোনো উপায়ে অন্য দেশে পালানোর চেষ্টা করছেন। আফগানিস্তানে থাকা নারী ফুটবলারদের কথা মনে পড়লেই বুক কেঁপে উঠছে দেশটির সাবেক ফুটবলার খালিদা পোপালের। দুই দশক আগে তালেবান দখলদারিত্বের সময় প্রাণভয়ে পোপালকেও দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে নিজের দেশ থেকে পালিয়ে যান পোপাল। দুই দশক পর দেশে ফিরে শরণার্থী শিবিরে থেকে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তিনি আফগানিস্তানের প্রথম নারী ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে থাকা নারী ফুটবলারদের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ডেনমার্ক প্রবাসী পোপাল বলেন, ‘দেশের নারী ফুটবলাররা এখন নিজেদের লুকিয়ে ফেলুক। এটা সহজ কাজ নয়। তবে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে আগে বাঁচতে হবে। সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করা ছবিসহ সমস্ত কিছু মুছে ফেলা উচিত।’
ফুটবলকে আঁকড়ে নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করেছিলেন পোপাল। তিনি নারী ফুটবলাদের একজোট করে খেলার জন্য উৎসাহিত করতেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল আফগান নারী ফুটবল। কিন্তু এখন আবার সব পিছিয়ে গেল। পোপাল বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। নতুন স্তরে ফুটবলকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল ওই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা। আমার কাছে এটা শুধু খেলা নয়, এটা নারীদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ছিল। আমি দেশের জার্সি পরলে গর্বিত হতাম।’
আফগান নারীদের ফুটবলে উৎসাহ দেওয়ায় পোপালকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তালেবান। যে কারণে ২০১৬ সালে তিনি ডেনমার্কে চলে আসতে বাধ্য হন। পোপাল বলেন, ‘আমি টেলিভিশন চ্যানেলে বলেছিলাম “তালেবান দেশের শত্রু”। তারপর থেকেই খুনের হুমকি আসতে থাকে। প্রচুর হুমকি মেসেজ পেতে থাকি। মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে আমায় বলেছে, এভাবে আমাদের ছেড়ে কেন চলে যাচ্ছ কেন? মেয়েরা এখন পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। কারণ ওদের বাড়ির আশেপাশের সকলেই জানত ওরা খেলে। তালেবান চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে।’