দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থ দেশের আর্থসামাজিক বিকাশে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে, তাদের পাঠানো অর্থ দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে সৌদি আরবে। সেখানে তাদের সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন।
এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা কাজ করছেন। তবে মানতেই হয়, তাদের মধ্যে দক্ষ শ্রমিক থেকে অদক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকের সংখ্যাই অনেক বেশি। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা ২০০০ সালে বেড়ে পৌঁছে ১৯৫ কোটি ডলারে। বর্তমানে তা ২৪৭৮ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ৬ শতাংশেরও বেশি। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্সের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক লোক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এবং উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করে বৈদেশিক রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এসব বিদেশগামী শ্রমিককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো হলে তারা আরো ভালো বেতনে চাকরি লাভের সুযোগ পাবেন। দেশও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। প্রতিবেশী ভারত বিশ্বের প্রধান রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ। এরপরই রয়েছে চীন। এসব দেশ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে অবস্থান করছে।
বিদেশগামীদের অধিকাংশই অদক্ষ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা হাড়ভাঙ্গা খাটনি খেটেও ন্যায্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরি করলে বাংলাদেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ডকে গতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চাইছে, তাতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসীদের জন্য যত বেশি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে তত বেশি রেমিট্যান্স আসবে দেশে। আর বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল থাকলে দেশের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।