ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ফেরত চাওয়ায় এক যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এদিকে, নির্যাতনের পর উল্টো বকুল হোসেন নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধেই আট বছর বয়সী শ্যালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এ ঘটনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে দেখা যায়, গাছের সঙ্গে দুই পা বাঁধা অবস্থায় ওই যুবককে কেউ লাঠি দিয়ে কেউ বা কোদাল দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। কেউ আবার শরীরের ওপর পা দিয়ে পাড়াচ্ছেন। যুবকের চিৎকারেও থামছে না তাদের নির্যাতন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ভোলাডাঙ্গা গ্রামে গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে এভাবে নির্যাতন করা হয় বকুল হোসেনকে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কের জেরে প্রায় আট বছর আগে ভোলাডাঙ্গা গ্রামের খোদাবক্সের ছেলে বকুল হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে লতিফার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বকুল মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
এরপর থেকে প্রতিমাসে স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠানো শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ কয়েক বছর বিদেশে থাকার পর বছরখানেক আগে তিনি দেশে ফিরেছেন। বাড়িতে এসে জানতে পারেন, তার বিবাহিত স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। এমন অবস্থায় পাঠানো টাকা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে ফেরত চাইলে তারা দিতে অসম্মতি জানান। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
বকুলের ভাবি মুন্নী বলেন, বিদেশে থাকা অবস্থায় বকুল তার স্ত্রী লতিফার কাছে টাকা পাঠাতো। দেশে ফিরে সে দেখে তার স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে করে সংসার করছে। এ অবস্থায় বকুল পাগলের মতো হয়ে গেছে। সব সময়ই টাকা আর স্ত্রীকে ফেরত চাইতো। শুক্রবার বিকেলে শ্বশুরবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার শ্বশুরসহ ওই বাড়ির লোকজন বকুলকে অমানবিক নির্যাতন করে।
বকুলের চাচি শিরিন বেগম বলেন, প্রথমে শ্বশুর পেছনে কোদাল দিয়ে আঘাত করে। এরপর অন্যরা এসে পা গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। বকুল চিৎকার করছিল কিন্তু তারা শোনেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বকুলের শ্বশুর লুতফার রহমান বলেন, প্রথমে আমি মারিনি। প্রথমে রাস্তায় তাকে মারা হয়েছে। পরে বাড়িতে ধরে এনে আবার মারা হয়। তখন আমিও মারছি।
বকুলের স্ত্রী লতিফা বেগম বলেন, বকুল যখন বিদেশে ছিল তখন তার মা-বাবা আমাকে নির্যাতন করতো। এরপর আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি এবং অন্য জায়গায় বিয়ে করে সংসার করছি। এখন বকুল দেশে ফিরে বলছে, সে আমার কাছে টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু সে কোনো টাকা পাঠায়নি। সে বারবার আমাদের বাড়িতে এসে টাকা চাইলে এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর কোনো প্রমাণ সে দেখাতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একদিন পুলিশ এ বিষয়ে আমাদের বাড়িতে তদন্তে আসলে বকুল পিটিয়ে এক পুলিশের হাত ভেঙে দেয়। এরপর আমার আট বছর বয়সী ছোট বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল বকুল। তখন তাকে ধরে মারা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিয়া বলেন, আমাদের কোনো সদস্যকে নির্যাতন করা হয়নি। যদি নির্যাতন করা হতো তাহলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিয়ে আমরা কঠোর আইনি ব্যবস্থায় যেতাম। তবে এ ঘটনায় বকুলের পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনের মামলা ও তার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। এখন তদন্ত করে সঠিক বিষয় বের করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।