ঢাকার কারওয়ান বাজারে গত রোববার ভরদুপুরে রুটি-কলা খাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। দুপুরে ভাত না খেয়ে রুটি-কলা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সাধারণ রেস্তোরাঁগুলোতে এক বেলা সবজি, ডাল ও ভাত খেতেও ৮০ টাকা লেগে যায়। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিনি দুপুরে রুটি-কলা খেয়ে কাটানো শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে সাইফুল সংসারে ব্যয় বাড়ার খতিয়ান তুলে ধরেন। বলেন, গত জানুয়ারি মাসে তাঁর বাসাভাড়া ৫০০ টাকা বেড়েছে। সন্তানের স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য দিনে রিকশাভাড়া লাগত ২০ টাকা করে ৪০ টাকা। এখন লাগে ৬০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে যাওয়া-আসা করতেও বাসভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলামের মতো সাধারণ মানুষের সংসারে ব্যয়ের বড় খাত চারটি—খাদ্য ও ঘরকন্নার উপকরণ কেনা, বাসাভাড়া ও সেবার বিল, সন্তানদের পড়াশোনা এবং পরিবহন। দেশে এই চারটি খাতেই একসঙ্গে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম অবস্থা মানুষের।
বাজারে এখন চালের দাম চড়া। সাম্প্রতিককালে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। বেড়েছে সাবান, টুথপেস্ট, প্রসাধন, টিস্যুসহ সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ভাড়া এক লাফে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। করোনার কারণে গত বছর না বাড়ালেও এ বছর বাড়ির মালিকেরা বাসাভাড়া বাড়িয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের বেতন ও খাতা-কলমের দামও বাড়তি।
সাইফুল ইসলাম নিজেই যেহেতু খাদ্যপণ্য সরবরাহের কাজ করেন, সেহেতু জানেন বাজারের পরিস্থিতি কী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। ধনীদের কথা আলাদা।
আওয়ামী লীগ সরকার এই মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েছিল ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওই দিনের বাজারদরের তালিকা ও গত বৃহস্পতিবারের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে।
শুধু ভোজ্যতেলের কথা ধরা যাক। মধ্যম আয়ের পাঁচজনের একটি পরিবারে গড়পড়তা ৫ লিটার সয়াবিন তেল লাগে। টিসিবির হিসাবে, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ থেকে ৫১০ টাকা, এখন তা ৭৪০ থেকে ৭৮০ টাকা। মানে হলো, শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। তবে বিগত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ফার্মে উৎপাদিত মুরগির দাম বছরজুড়েই বেশি থাকছে। যেমন ব্রয়লার মুরগির দাম এখন বছরের বেশির ভাগ সময় প্রতি কেজি ১৫০ টাকার বেশি থাকে। করোনার আগেও এই দর ১৩০ টাকার আশপাশে থাকত। বিক্রেতাদের দাবি, মুরগির বাচ্চা, খাবারের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই আর আগের দামে ফেরার আশা কম।
সীমিত আয়ের পরিবার কালেভদ্রে এখন গরুর মাংস কিনতে পারে। টিসিবি বলছে, এখন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। তিন বছর আগে এই সময়ে ছিল ৫০০ টাকার নিচে।