ম্যাচটা শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তানের হলেও, পুরো সময় জুড়ে টেলিভিশন স্ক্রিনের এপারে বসে থাকা লাখো বাংলাদেশি ছিল প্রার্থনায়। নিজেরা কিছু করার ছিল না, তাই তাকিয়ে ছিল অন্যের ভরসায়। শেষ পর্যন্ত সেই ভরসার প্রতিদান দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে।
লঙ্কানরা জিতেছে ৬ উইকেটে। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তোলে আফগানিস্তান। শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবীর ঝড়ে ৩২ রান তুলেছিল। কিন্তু এই রান যথেষ্ট হলো না। এই রান শ্রীলঙ্কা টপকে গেছে সহজেই, ৮ বল হাতে রেখেই।
আবুধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটি ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। যদিও ম্যাচটি ছিল শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তানের, তবু কাগজে-কলমে সেখানে উপস্থিত ছিল তৃতীয় একটি দল-বাংলাদেশ। কারণ, এই একটি ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিচ্ছিল, কে যাবে সুপার ফোরে। শেষমেশ হাসি হেসেছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ, বিদায়ের বেদনায় ভেঙেছে আফগান শিবির।
ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। শুরুটা ছিল রীতিমতো টালমাটাল। ওপেনার গুরবাজ ৮ বলে ১৪ রানে ফিরতেই ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামে। পরপরই করিম জানাত ও সেদিকউল্লাহ আতালকেও ফিরিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার পেসার নুয়ান থুসারা। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই আফগানিস্তান হারিয়ে ফেলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
ইবরাহিম জাদরান ধীরগতির একটি ইনিংস খেললেও মাঝের ওভারে দ্রুত উইকেট হারায় আফগানরা। ৭৯ রানের মাথায় ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দলটি। সেখান থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ান মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খান। বিশেষ করে নবী শেষ ওভারে ছিলেন বিধ্বংসী। টানা ৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন ২২ বলে ৬০ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে তোলে ১৬৯ রান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দেন থুসারা। মাত্র ১৮ রান খরচ করে নেন ৪টি উইকেট। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন চামিরা, ভেল্লালাগে ও শানাকা-যারা প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। ওপেনার নিসাঙ্কা ফেরেন মাত্র ৬ রান করে। এরপর এক প্রান্ত ধরে রাখেন কুশল মেন্ডিস। অন্যদিকে কামিল মিশারা ও কুশল পেরেরা ছোট ছোট ইনিংস খেললেও ইনিংসটি এগিয়ে নিয়ে যান মেন্ডিস। পেরেরা ২০ বলে করেন ২৮ রান, আর আসালাঙ্কার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৭।
শেষ দিকে কামিন্দু মেন্ডিস এসে কুশল মেন্ডিসকে দারুণ সঙ্গ দেন। দুজনে মিলে কার্যত নিশ্চিত করে ফেলেন দলের জয়। কুশল মেন্ডিস তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ৮ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা, সঙ্গে বাংলাদেশও পেয়ে যায় সুপার ফোরের টিকিট।
এ জয়ের মাধ্যমে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার ফোরে পা রাখে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে দুই জয় নিয়ে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। তিন দলের মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তান বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (নবী ৬০, জাদরান ২৪, রশিদ ২৪, আতাল ১৮, গুরবাজ ১৪; তুষারা ৪/১৮, শানাকা ১/২৯, ভেল্লালাগে ১/৪৯, চামিরা ১/৫০)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৪ ওভারে ১৭১/৪ (কুশল মেন্ডিস ৭৪*, কুশল পেরেরা ২৮, কামিন্দু মেন্ডিস ২৬*, আসালাঙ্কা ১৭; ওমরজাই ১/১০, নবী ১/২০, নুর ১/৩৭, মুজিব ১/৪২)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: কুশল মেন্ডিস