পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেইনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ‘উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ’ করছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সব পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে আজকের তফাৎ হল, মিলিটারি মুভমেন্ট দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে শাহরিয়ার আলম বলেন, যে কোনো রিজিওয়নে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেটা কেবল ওই অঞ্চলের জনগণের জন্যই নয়। এটাকে নিশ্চিত করতে পারে ডায়ালগ। এবং দুপক্ষে বা বহু পক্ষ হলে তাদের যে প্রত্যাশা, তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে।
ইউক্রেন সংঘাতে বিবাদমান বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে নিজেদের অবস্থান সরকারের কাছে ব্যাখ্যা করেছে বলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, লার্জলি আমাদের পজিশন হল, নন ইন্টারফেয়ারেন্স। বিশ্বে যখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়, দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে যায়, তখন দুপক্ষ এসে শুধু বাংলাদেশ নয়, সবদেশের কাছে তাদের অবস্থানগুলি স্পষ্ট করবেন।
বিশেষ করে যে দেশগুলো অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ পজিশন মেইনমেইন করে, তারই ধারাবাহিকতায় তারা কথা বলেছে, নাথিং রং।
ইউক্রেনে সম্প্রতি সংঘাত বাড়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ধরনের সংঘাত পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে আমরা এখন পর্যন্ত এমন অবস্থানে নেই যে, বিশেষ কোনো বিষয়ের ওপর কমেন্ট করতে পারি।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টিও বাংলাদেশ পর্যালোচনা করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংকটের সমাধানের ওপর অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নির্ভর করে, যা কেবল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্ব এখন মুখোমুখি অবস্থানে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে ‘আলোচনার ভিত্তিতে’ সমস্যার সমাধান করতে সবপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ।
পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এর মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মত ইউরোপে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের বড় ধরনের কোনো যুদ্ধের সূচনা হল।
বৃহস্পতিবার আরেক বিবৃতিতে ইউক্রেনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সেখানে বলা হয়, ইউক্রেইনে সম্প্রতি সংঘাত বাড়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ কারণে আমরা সবপক্ষকে সর্বোচ্চ মাত্রার সংযম, দ্বন্দ্ব নিরসন এবং সংকট সমাধানে কূটনীতি ও সংলাপের পথ ফেরার প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানাই।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিতে চায়, যা নিয়ে রাশিয়ার ঘোর আপত্তি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে, তাতে ওই অঞ্চলের উত্তেজনার উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিশ্বময়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইউক্রেনের ওপর স্থল, নৌ ও আকাশ পথে হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের বাহিনীও লড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার।