আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ফরম কিনেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া) নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন এই অভিনেত্রী।
পরে বিকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এসে মাহি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মাহির সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী রকিব সরকার।
কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটিতে (একাংশ) পদ পেয়েছেন মাহিয়া মাহি। আগামী ২ বছরের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।
সংসদ থেকে বিএনপি দলীয় সদস্য পদত্যাগ করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসনটি শূন্য হয়। ওই আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।
আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মাহির পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মাহি নিজেও আওয়ামী লীগ করেন।
ফলে তাকে মনোনয়নপত্র কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, আমাদের দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।
বিব্রত তৃণমূল আ.লীগ : উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন মাহি। গত ২৬ ডিসেম্বর বিকালে নাচোল রেলস্টেশনে এবং পরদিন বিকালে গোমস্তাপুরের রহনপুর বাজারে ণসংযোগ করেন তিনি।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি নির্বাচনি পোস্টার পোস্ট করেন মাহি। মুহূর্তেই তার পোস্টারটি ভাইরাল হয়।
তবে মাহির এমন কাণ্ডে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে সক্রিয় হওয়াকে তারা ভালোভাবে দেখছেন না। তাদের দাবি, আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়া উচিত।
নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, রাজনীতি করার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া আছে। তা অনুসরণ করার পর এসব কর্মকাণ্ড করলে তা মানানসই ছিল।
তার এমন কাণ্ডে নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন তাকে মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।
হঠাৎ করেই মাহিয়া মাহির মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় হওয়া নিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা বলেন, মাহিয়া মাহির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সম্পর্ক নেই।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তার গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা কর্মী উপস্থিত ছিল না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বিপদ সংকেত হিসাবেই আমরা মনে করি।
এখানে অনেকেই রয়েছেন, যারা নিজ নিজ কর্মগুণে দলে সক্রিয় অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আশা করি, তাদের মধ্যেই কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, মনোনয়ন চাওয়া নাগরিকের অধিকার।
যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন তারা যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। মাহি সম্ভবত আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক কমিটিতে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে যদি তিনি রাজনীতিতে আসতে চান তবে আসুক না।