অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন জায়েদ (এমবিজেড) তুরস্ক সফর করেছেন। এটি ছিল তার এক দশকের মধ্যে প্রথম তুরস্ক সফর। একে তুর্কি কর্মকর্তারা ‘নতুন যুগের শুরু’ হিসেবে দেখছেন। এ সফর প্রকৃত অর্থে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মোড় নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করার পরিকল্পনা করছেন
সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এ সফরের বিষয়ে জানান। খবর ডেইলি সাবাহর।
খবরে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। একই সঙ্গে মিসর ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খুঁজছে তুরস্ক।
তুর্কমেনিস্তানের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ১৫তম ইকোনমিক কোঅপারেশন অরগানাইজেশনের সম্মেলন থেকে ফেরার সময় তুরস্কের সংবাদমাধ্যমকে এরদোগান বলেন, আমিরাতের যুবরাজের তুরস্ক সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, মুহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে ২০১১ সালে একবার বৈঠক হয়েছিল। এর পর আমরা কিছুটা মতপার্থক্যের মধ্যে সময় পার করেছি। তবে এ সময়ে গোয়েন্দারা আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঠিক ছিল।
এরদোগান উল্লেখ করেন, যুবরাজের আগে তার ভাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আগস্টে তুরস্কে সফর করেন। সেটি ছিল সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে প্রথম কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
‘তারা আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা আমাদের বিনিয়োগ কার্যালয়ের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তারা বলেন, তারা তুরস্কে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এর পর মুহাম্মদ বিন জায়েদ নিজে তুরস্ক সফরের বিষয়ে আগ্রহ দেখান এবং শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে’, যোগ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন জায়েদ (এমবিজেড) তুরস্ক সফর করেছেন। ২০১২ সালের পর আমিরাতের ডি ফ্যাক্টো নেতা ও দেশটির পররাষ্ট্র নীতির নির্ধারক এমবিজেডের এটি ছিল প্রথম আঙ্কারা সফর। দুই দেশই যে তাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী, সেটি এ সফরের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
লিবিয়ায় আঙ্কারার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা এবং ২০১৬ সালে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে অর্থায়নের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দায়ী করে তুরস্ক। এর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। এ ছাড়া সিরিয়া ও কাতার নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান।
কিন্তু এ সফরের পরই দুই দেশের কর্মকর্তাদের সুর একেবারে পাল্টে গেছে।
তুরস্ক এ সফরকে ‘নতুন যুগের শুরু’ হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে এ সফর শুধু আরব আমিরাত নয়, আরব দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ককে গতি দেবে বলে ধারণা আবুধাবির সংবাদমাধ্যমগুলোর।
এমবিজেডের আঙ্কারা সফরে বাণিজ্য, জ্বালানি ও পরিবেশ সম্পর্কিত বেশ কিছু চুক্তি সই হয়। একই সঙ্গে আরব আমিরাত তুরস্কে বিনিয়োগের জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে।
এ বিষয়ে এরদোগান বলেন, প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সংবেদনশীল সফর ছিল। আমরা সফর চলাকালে বেশ কিছু চুক্তি করেছি। এসব চুক্তির মধ্যে যেসব ধারা রয়েছে, আমি আশা করি এসব ধারা আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং তা স্থায়ী হবে। দ্বিপক্ষীয় এবং প্রতিনিধিদলের মধ্যে আমাদের বৈঠকগুলো খুব ভালোভাবে হয়েছে এবং আমরা সেখানে চুক্তিসই করেছি।
সম্প্রতি তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা নজর কেড়েছে আমিরাতের। বিশেষ করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তুরস্ক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যুদ্ধজাহাজ ও মনুষ্যবিহীন সামরিক যান তৈরি করেছে। দেশটির তৈরি করা বিভিন্ন অস্ত্র ইতোমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে। এসব কারণে আরব আমিরাত চাইছে তুরস্কের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে। এমন পরিস্থিতিতে এমবিজেডের এ সফর ঘিরে আবারও সম্পর্কোন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে আঙ্কারা ও আবুধাবি।