দুই তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার জয় হলো উচ্চ আদালতে। আজ উচ্চ আদালতের দেওয়া এক আদেশে ১০ মাস পর নিজের স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছেন রংপুরের বদরগঞ্জের তরুণ শ্যাম সুন্দর। তার স্ত্রী হেমা শর্মা বিয়ের পরদিন থেকে মা ও মামাদের হাতে বন্দি থেকে নির্যাতিত হয়ে আসছিলেন।
স্ত্রীকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন শ্যাম সুন্দর। শুনানি শেষে সে রিট নিষ্পত্তি করে আজ আদালত আদেশ দেন। আদেশে আদালত হেমা শর্মাকে স্বামী শ্যাম সুন্দরের হাত তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর আদালত কক্ষেই শ্যাম সুন্দর তার স্ত্রীকে বুঝে নেন।
রোববার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে চাঞ্চল্যকর এই রিটের নিষ্পত্তি হয়।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর এ রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। আদালতে শ্যাম সুন্দরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
৩১ অক্টোবর শুনানি শেষে হেমা শর্মাকে আজ (১৩ নভেম্বর) আদালতে হাজির করতে তার মা সাবিত্রী রায়, মামা গণেশ শর্মা ও নারায়ণ শর্মাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী আজ হেমা শর্মাকে নিয়ে আদালতে আসেন তার মা ও মামারা।
পুলিশি প্রহরায় হেমা শর্মাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার বক্তব্য শুনতে চান। তখন হেমা শর্মা আদালতকে জানান, তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী। শ্যাম সুন্দর রায়কে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তারা একসঙ্গে থাকতে চান।
এসময় হেমা শর্মা বেশ আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি শ্যাম সুন্দরকে বিয়ে করার কারণে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের বিবরণ দেন। তাকে দিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করানোর কথাও আদালতকে জানান।
আদালত এ সময় হেমার মা, মামা, শ্যাম সুন্দর ও তার বাবার বক্তব্যও শোনেন। পরে আদালত শ্যাম সুন্দর রায়ের হাতে তার স্ত্রী হেমা শর্মাকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
শ্যাম সুন্দরের পক্ষে শুনানি করা আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের আজকের আদেশের ফলে হেমার দীর্ঘ ১০ মাসের বন্দি জীবন ও নির্যাতনের সমাপ্তি হলো। দীর্ঘ দশ মাস পর এই দম্পতি মিলিত হওয়ার সুযোগ পেলেন। এই তরুণ দম্পতির ভালোবাসার গল্পের সফল সমাপ্তি হওয়ায় স্বস্তি ও তৃপ্তি অনুভব করছি।
জানা গেছে, এ বছরের ১৩ জানুয়ারি ধর্মীয় নিয়ম মেনে শ্যাম সুন্দর ও হেমা শর্মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর রংপুরে নোটারি পাবলিকে এফিডেভিট সম্পন্ন করেন তারা। বিয়ের বিষয়টি জানার পর হেমাকে পরদিন ভোরে জোর করে তুলে নিয়ে যায় তার পরিবার।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেন শ্যাম সুন্দর। কিন্তু কমিশন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
রিট আবেদনে বলা হয়, শ্যামের বয়স ২২ বছর, আর হেমার ১৯ বছর। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ২২(১)(ক) অনুযায়ী দুজনের বিয়ে নিবন্ধিত হয়। দুজনের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জে। কিন্তু বিয়ের পরদিন তার স্ত্রীকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। পরে স্ত্রীর ফোন পেয়ে জানতে পারেন, বয়স ১৫ বছর দেখিয়ে তাকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে (আসক) রেখে গেছেন তার মামা গণেশ শর্মা। পরে সেখান থেকে ২৫ মে মামা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, আইনানুযায়ী তারা এখন স্বামী-স্ত্রী। কেউ তাদের এই পবিত্র সম্পর্ককে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু এই বিয়ে মেয়ের মা ও মামারা মেনে নিতে পারছেন না। এরই মধ্যে তার স্ত্রীকে বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ভিসাও করে ফেলেছেন।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রংপুর পুলিশ সুপার, বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সাত জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছিল।