ব্রাজিল ফেডারেল পুলিশের সহায়তায় ২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্রাজিলের সাউ পাউলো এবং মিনাস জিরাইসে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন বাংলাদেশিসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। ‘অপরেশন ব্লাড টাইজ’ শিরোনামে এই অভিযানে এর আগেও বহুসংখ্যক বাংলাদেশিসহ মানবপাচার চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নিকোল নাভাস ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এই চক্রের সদস্যরা মোটা অর্থের বিনিময়ে প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক আদম বিভিন্ন দেশ হয়ে ব্রাজিলে জড়ো করছে। এসব লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকিয়ে দেয়ার চুক্তিতে ওরা অর্থ নেয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহী ঐসব অসহায় লোকজনকে।
নিকোল নাভাস স্বাক্ষরিত বিচার বিভাগের এক প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার সময় সীমান্ত রক্ষীদের হাতে গ্রেফতার হওয়া লোকজনের বিবরণে সংঘবদ্ধ এই মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং অভিবাসন দফতরের পুলিশ। এ লক্ষ্যে তারা ব্রাজিলের পুলিশের আন্তরিক সহায়তায় উপরোক্ত সাউ পাউলো এবং মিনাজ জিরাইসে তদন্ত চালিয়ে মানবপাচার চক্রের অন্তত: ২১টি ঘাঁটিতে এই অভিযান চালানো হয়। পাচারকারি চক্রের ৮ জনকে গ্রেফতারের সময় উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু অভিবাসীকে। তাদের প্রায় সকলেই বাংলাদেশি। লিবিয়ার অধিবাসীও রয়েছে কয়েকজন। অভিযানে ব্রাজিলের কয়েকজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এই চক্রের সহযোগী।
সংঘবদ্ধ এই চক্রের নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দেয়ার অনুভূতি ব্যক্তকালে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ব্রাজিলে কর্মরত এটাশে প্যাট্রিক চেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের এমন তৎপরতা রুখে দিতে ব্রাজিল প্রশাসনের সহায়তার বিকল্প ছিল না। এজন্যে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর প্রতি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে দিনের পর দিন যারা মোটা অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে শতশত মানুষ ব্রাজিলে জড়ো করে যুক্তরাষ্ট্রের পথে ঠেলে দিচ্ছে, এদের অনেকেই দুর্গম পথে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছে, এমন একটি নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকল্প ছিল না।
আরিজোনার ফিনিক্সে কর্মরত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স অফিসার স্কট ব্রাউন বলেন, ‘এভাবেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার সুরক্ষায় কাজ করছি। আন্তর্জাতিক পাচারকারি নেটওয়ার্কের এহেন জঘন্য অপতৎপরতায় সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। জননিরাপত্তার সাথে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পুলিশের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের এই অভিযান যথাযথভাবে পরিচালিত হওয়ায় নিশ্চয়ই সংঘবদ্ধ ঐ চক্র আর এমন অপতৎপরতায় সাহস দেখাবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগে ক্রিমিনাল ডিভিশনের মানবপাচার বিরোধী সহকারি এটর্নি জেনারেল কেনেথ এ পোলাইট জুনিয়র এ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক পার্টনারদের আন্তরিক সহায়তার মধ্যদিয়েই আমরা মানবপাচার নেটওয়ার্ক বিরোধী অভিযানে সক্ষম হচ্ছি। এই অভিযানে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিতে ৭১০০ জন অফিসার রয়েছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের ২২০ সিটিতে কাজ করছে। একইসাথে ৫৪ দেশের ৮৬ সিটিতেও রয়েছে এই দফতরের লোকজন।