পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনায় এক অভিযুক্তকে আটকের পর তার একটি ভিডিও ফাঁস হয়। এরপরই সেটি ভাইরাল হয় এবং ওই ভিডিওতে অভিযুক্ত হামলাকারী স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেন।
যদিও অভিযুক্ত ওই হামলাকারী তখন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এই ঘটনায় একটি পুলিশ স্টেশেনের সকল কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহি। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার পিটিআই প্রধান পায়ে একাধিক গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় পাকিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় এক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়। এরপরই পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযুক্ত ওই হামলাকারীর স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
পরে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ওই থানার সকল পুলিশ সদ্যকে বরখাস্ত করেন পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ ইলাহী। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে থানার স্টেশন হাউস অফিসারও (এসএইচও) রয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ভিডিওতে হামলাকারী বলেন, লোকজনকে বিভ্রান্ত করার কারণে তিনি পিটিআই চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে চেয়েছেন।
তার দাবি, ‘ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তাকে সহ্য করতে পারছিলাম না। যে কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি। আমি ইমরান খানকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। আমি কেবল ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া আমার আর কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না।’
হামলাকারী এই যুবক বলেন, ইমরান খান লাহোর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে এই হামলায় তার কোনও সহযোগী আছে কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দেন হামলাকারী। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে আর কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম।’
সংবাদমাধ্যম পাকিস্তান অবজারভার বলছে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী পারভেজ এলাহি ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের ভিডিও ফাঁসের ঘটনাটি কঠোর ভাবে নিয়েছেন এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিবৃতি ফাঁস করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার স্টেশন হাউস অফিসারসহ (এসএইচও) সকল পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেছেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে। এমনকি জব্দকৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক অডিট করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান অবজারভার আরও জানিয়েছে, দায়িত্বজ্ঞানহীন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পাঞ্জাবের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এতে বলা হয়েছে, হামলাকারীর ভিডিও বিবৃতি ফাঁস হওয়ার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে এক জরুরি বৈঠকে আইজিপিকে এই ঘটনার উদ্দেশ্য প্রকাশের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে গোলাগুলির ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়।
সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী পারভেজ এলাহি বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদে ইমরান খানের লংমার্চে হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি উচ্চ-পর্যায়ের যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্টকে (সিটিডি) জেআইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে হামলার পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা যায়।
এছাড়া বিশেষ এক ভিডিও বার্তায় পারভেজ এলাহি বলেছেন, তিনি শওকত খানম হাসপাতালে ইমরান খানের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে অনেক ভালো বোধ করছেন। ইমরান খান তার মিশন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বলেও জানান তিনি।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হামলাকারী একক কোনো ব্যক্তি নয়, ঘটনাস্থলে দুজন হামলাকারী ছিল। আমরা জানতে চাই এই ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে এবং কারা অভিযুক্তদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। হামলার জন্য অভিযুক্তরা কত টাকা পেয়েছেন এবং কোথা থেকে আনা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিডিয়াতে অভিযুক্তদের ভিডিও বিবৃতি ফাঁস করার অভিযোগে বরখাস্ত করা পুলিশ অফিসারদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার তা জানতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন মিডিয়ার সঙ্গে শেয়ার করা হবে এবং প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।