মো. কামরুল ইসলাম
মালদ্বীপের সৌন্দর্যের কথা মনে হলেই নীল জলের ঢেউ আছড়ে পড়ে নয়ন সাগরে। অপরূপ সৌন্দর্য আসলে কত অপরূপ তা মালদ্বীপের নীল জলের স্পর্শ না পেলে বোঝাই যাবে না। জলের সৌন্দর্য কত চিত্তাকর্ষক হতে পারে তা ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ দেশটির দেখা না পেলে জীবনের ভালো লাগার অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যাবে।
পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত দেশ ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। শান্ত-মনোরম পরিবেশই পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। যেখানে পানির রঙ নীল আর বালির রঙ সাদা। তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মালদ্বীপের সবগুলো দ্বীপের চারদিকে ঘিরে আছে সাগরের অফুরন্ত জলরাশি।
পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম ও অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। বিধাতা যেন দুই হাত ভরে প্রকৃতির মায়াবী রূপে সাজিয়েছেন দেশটিকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, স্বর্গের দ্বীপ, প্রকৃতির কন্যা যেন সৌন্দর্যের রানি। যা দুনিয়াজোড়া মানুষকে মুগ্ধ করে ও টানে। সরল, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করে সকলকে।
ছোট ছোট দ্বীপগুলো যেন নানান রঙে সেজে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ভ্রমণপিপাসুরা যারা সমুদ্র পছন্দ করেন, নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চান, সমুদ্রের অবগাহনে নিজেকে ম্লান করাতে চান, প্রকৃতির সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যের সুরা পান করতে চান, তাদের জন্য মালদ্বীপই হচ্ছে আকর্ষণীয়, প্রিয় ও আদর্শ স্থান।
ভ্রমণপ্রিয় সকলের কাছে মালদ্বীপ যেন পছন্দের শীর্ষে। প্রাচ্য কিংবা প্রাশ্চাত্য বা দূরপ্রাচ্যের সকলে ছুটে আসে নিজের মতো করে মহাসাগরের বুকে এক চিলতে জেগে ওঠা দ্বীপগুলোতে নিজেকে খুঁজে পেতে।
মালদ্বীপকে প্রকৃতি যেন অকৃপণ হাতে সাজিয়েছে। যা দুনিয়াজোড়া মানুষকে বিমুগ্ধ করছে। আর এ কারণেই এ দেশের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন। এক ঋতুর দেশ মালদ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম মিলে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ। এ দ্বীপগুলোর সমন্বয়েই সৃষ্টি মালদ্বীপ। মালদ্বীপে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে রয়েছে অত্যাধুনিক ভেলেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মালদ্বীপের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে পর্যটকরা অনায়াসে ছুটে বেড়াতে পারেন এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে।
পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র মালদ্বীপেই বিশালকায় সাবমেরিনে করে সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র ভ্রমণে পর্যটকদের ১২০ ফুট গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। আর সেখানে বিশাল বিশাল মাছ, গাছ-গাছালি, ভয়ংকর প্রাণী, উঁচু-নিচু পাহাড় দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।
সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণ এতই রোমাঞ্চকর যে, বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে মালদ্বীপে। সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য রয়েছে সাফারিবোট। পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য মালদ্বীপে রয়েছে প্রায় অসংখ্য সাফারিবোট। মালদ্বীপের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসছে হাজার হাজার পর্যটক।
মাত্র দুই দশকে মালদ্বীপ যেন হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রোল মডেল। পরিকল্পিত বাসস্থান, নাগরিক সুবিধা, ড্রেনেজ ও নগর ব্যবস্থাপনা, ইউরোপিয়ান ধাঁচের ফুটপাথ ও দোকান, বাড়িঘর, সুন্দর ও বিলাসবহুল নগর বাস, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল সবই পাবেন মালদ্বীপে। এখানকার মানুষগুলোও পর্যটকবান্ধব আর অসম্ভব ভালো মনের। চুরি ডাকাতি ছিনতাই এসব তাদের কাছে বলতে গেলে অপরিচিত। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ মালদ্বীপের সামাজিক কাঠামোকে বদলে দিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনি যেন দেশটিকে আগলে রেখেছে।
বিচে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর ছেলে-মেয়েদের জলক্রীড়া (সার্ফিং)। যখন সুনামি টাওয়ার ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে শুরু হয় মায়াবী গোধূলি, শুরু হয় সূর্যাস্ত। রাতের নিস্তব্ধতায় পর্যটকেরা যখন আসেন গোসল পার্কে সমদ্রস্নানে বিলীন করে দিতে নীলাভ প্রকৃতিতে।
কাজের প্রয়োজনে লক্ষাধিক বাংলাদেশি মালদ্বীপে বসবাস করছেন। প্রতিদিন শত শত পর্যটক মালদ্বীপের সৌন্দর্য দর্শনে ভ্রমণে আসছেন। পর্যটকরা মালদ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার সময় আবার আসার দিনক্ষণ ঠিক করার পরিকল্পনা সাজিয়ে যায়। এ এক মায়ার বাঁধন। প্রকৃতি আর ভারত মহাসাগরের জলরাশি পর্যটকদের কত আপন করে নিতে পারে তা মালদ্বীপ ভ্রমণ না করলে ঠিক উপলব্ধির জায়গাটায় বিশাল শূন্যতা বিরাজ করে।
মালদ্বীপ ভ্রমণকে সহজ ও সাবলিল করার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে চার দিন ঢাকা থেকে মালদ্বীপের রাজধানী মালে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে।
লেখক মো. কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স