আইফোনের উদ্ভাবক ও প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাপল তার উৎপাদন কার্যক্রম চীন থেকে ভারতে সরিয়ে আনা শুরু করেছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারতে ইতোমধ্যে ফোনটির সর্বশেষ সংস্করণ আইফোন ১৪ ও আইফোন ১৪ প্লাস তৈরি করা শুরু করেছে কোম্পানি।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘আমাদের আইফোন ১৪ অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত সুবিধা ও গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সক্ষমতাসম্পন্ন। ভারতে এই মোবাইল ফোনটির প্রস্তুত কার্যক্রম শুরু করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।’
২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি প্রথম আইফোন বাজারে আনে অ্যাপল। তারপর গত ২৫ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দামি মোবাইল ফোনটির মোট ১৫টি সংস্করণ এনেছে কোম্পানি। সর্বশেষ সংস্করণ আইফোন ১৪ এবং আইফোন ১৪ প্লাস।
শুরু থেকেই অ্যাপলের আইফোন তৈরির কারখানাগুলো ছিল চীনে। এ পর্যন্ত এই ফোনটির যত সংস্করণ বাজারে এসেছে, প্রত্যেকটিই প্রস্তুত করা হয়েছে চীনের করাখানাসমূহে। সেই হিসেবে দুই যুগেরও বেশি সময় পর উৎপাদন কর্মকাণ্ডে বড় পরিবর্তন আনছে অ্যাপল।
এশিয়ায় অ্যাপরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হলো ফক্সোকন কোম্পানি। আইফোনের অনেক সংস্করণ এই কোম্পানি তৈরি করেছে। ২০১৭ সালে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছিল ফক্সোকন।
কিন্তু এবার অ্যাপল নিজেই তার যাবতীয় উৎপাদন কার্যক্রম ভারতে স্থানান্তর করতে চাইছে।
বিবিসির প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, অ্যাপলের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। সেসবের মধ্যে প্রধান দু’টি কারণ হলো ওয়াশিংটন ও চীনের মধ্যকার উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা বৈরিতা এবং চীনের ‘জিরো কোভিড’ নীতি। এই দু’কারণে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই চীনে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে মার্কিন এই টেক জায়ান্ট।
এছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ভারতের বাজারে প্রবেশ করা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভারতে শ্রমশক্তি অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য। তাছাড়া দেড়শ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারও রয়েছে ভারতের।
এই মুহূর্তে অবশ্য ভারতের বাজারে একচেটিয়াভাবে দখল করা সম্ভব নয় অ্যাপলের পক্ষে। কারণ ভারতীয় ভোক্তাদের একটি বিশাল অংশ দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বাজার দখল করতে হলে সেই সব কোম্পানিকে টেক্কা দিতে হবে অ্যাপলের।
তবে এই ক্ষেত্রে অ্যাপলের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভারতের বাণিজ্যনীতি। এই নীতি অনুযায়ী ভারতের সরকারকে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হচ্ছে মার্কিন এই টেক জায়ান্টকে। ফলে ভারতে উৎপাদন হলেও দেশটির বাজারে এই ফোনের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না অ্যাপলের পক্ষে।
কিন্তু তারপরও ভারতে লাভজনক বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে অ্যাপলের; আর এই সম্ভাবনার মূল প্রভাবক আইফোনের সুনাম ও ভারতীয় ভোক্তাদের আবেগ। কোম্পানির এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতীয় ক্রেতারা যখন আইফোনের গায়ে মেড ইন ইন্ডিয়া লেখাটি দেখবেন, তারা অন্যান্য ফোনের চেয়ে এই ফোনটিকেই বেশি পছন্দ করবেন।’
বিখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগকারী ব্যাংক জে পি মর্গানও ভারতে আইফোনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সায় দিয়েছে।
অ্যাপলের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘চলতি বছর আইফোনের মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ ভারতে হবে বলে আশা করা যাচ্ছে; এবং আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে অ্যাপলের পুরো উৎপাদন কার্যক্রম ভারতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে আমাদের।’