রাজধানীতে বাসা বাড়ির বেশিরভাগ পয়ো:বর্জ্যের লাইন দেওয়া হয়েছে খাল বা লেকে। এতে এসব বর্জ্যের কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। রাজধানীতে ওয়াসার ধারণ ক্ষমতার বেশি পয়ঃবর্জ্য তৈরি হওয়ার কারণে ওয়াসা সেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষম ছিলোনা। এতে গুলশান, বনানী, বারিধারার বেশিরভাগ বাড়ির মালিক বাড়ির পয়ঃসংযোগ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে দিয়েছেন। এবার রাজধানীর পয়ঃবর্জ্য শোধন করে পরিষ্কার ও দুর্গন্ধমুক্তভাবে সেই পানি নদীতে ফেলতে ঢাকা ওয়াসা মোট পাঁচটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প উদ্বোধন হলে গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ডিওএইচএস, তেজগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন, নিকেতন, কলাবাগান (আংশিক) এবং হাতিরঝিল ও তৎসংলগ্ন এলাকার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এতে বালু নদীতে নিষ্কাশন এবং এর মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ হবে। এই প্রকল্পে দিনে ৫০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন হবে। আর এর সুফল পাবে রাজধানীর ৫০ লাখ মানুষ।
বর্তমানে রাজধানীতে ওয়াসার মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে। ৮০ শতাংশ এলাকাতেই পয়ো:লাইন নেই। ঢাকা শহরে প্রতিদিন তৈরি হওয়া ১৭৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্যের মধ্যে মাত্র ৩৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন করতে পারে ঢাকা ওয়াসা। বাকি ১৪০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য ঢাকা ও চারপাশের নদী, খাল এবং জলাশয়ে মিশছে। এর ফলে নগরীর পরিবেশ দূষণ এবং বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পুরো ঢাকার পয়োবর্জ্য লাইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে শোধনাগার প্রকল্প নেয় ওয়াসা। দাশেরকান্দি প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৫ সালে। এই বছরেই কাজ শুরু হলে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চীন সরকার। বর্তমানে প্রকল্পটির পয়বর্জ্যের লাইন তৈরির কাজ চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীতে বাকি আরো চারটি শোধনাগার হবে উত্তরা, মিরপুর, রায়েরবাজার ও পাগলায়।