বৃহস্পতিবার , ২৫ আগস্ট ২০২২ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অস্ট্রেলিয়া
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আফ্রিকা
  6. আবহাওয়া
  7. আমেরিকা
  8. আয়ারল্যান্ড
  9. ইউক্রেন
  10. ইউরোপ
  11. ইতালি
  12. কানাডা
  13. খেলাধুলা
  14. গ্রাম বাংলা
  15. চিত্র বিচিত্র

গ্রিসে দেড় মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশি প্রবাসী

প্রতিবেদক
Probashbd News
আগস্ট ২৫, ২০২২ ১:০৮ অপরাহ্ণ

Spread the love

ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রায় দেড় মাস ধরে নিখোঁজ মো. ওয়াহিদ আলী (২৭) নামে এক প্রবাসী। তার পরিবার ও গ্রিসে থাকা স্বজনদের অভিযোগ অর্থ আত্মসাতের জন্য তাকে গুম করেছে একটি চক্র। ঘটনার পর থেকে দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে অভিযুক্ত তিন সহোদর ও তাদের সহযোগীরা।

ঘটনাটি ঘটেছে গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে মিনি বাংলাদেশ নামে পরিচিত মানোলাদার লাপ্পা গ্রামে। এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিখোঁজের মামা রমিজ মিয়া। নিখোঁজ ওয়াহিদ হবিগঞ্জ জেলার অনন্তপুর গ্রামের সিদ্দিক আলীর ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জের ওয়াহিদ আলী দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গ্রিসের কৃষি কাজের জন্য প্রসিদ্ধ গ্রাম মানোলাদার পাশে লাপ্পা নামক গ্রামে বসবাস করে আসছিল। দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসের লাপ্পায় ‘লিটন মিনি মার্কেট’ নামের একটি বাংলাদেশি মুদি দোকানে কর্মরত ছিলেন তিনি। দোকানটি পরিচালনা করতেন কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের ইউনুস মিয়া ওরফে লিটন, মো. ইদ্রিস ও কুদ্দুস মিয়া নামে তিন সহোদর ও তাদের বন্ধু সুলতান আহমেদ এবং পলাশ মিয়া।

তাদের দোকানে কর্মরত ওয়াহিদের সততায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মাঝে সৎ ব্যক্তি হিসেবে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি লাভ করে। তাই বিশ্বাস করে তার মাধ্যমে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের উপার্জিত অর্থ জমা রাখতেন এবং বিকাশ-মানিগ্রামের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতেন। লাপ্পায় বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ কাগজ পত্র না থাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেননি, তাই কৃষি কাজের মতো পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ নিরাপদ মনে করে জমা রাখতেন লাপ্পায় বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

আর সেই ইউরো ওয়াহিদ তার মালিকের কাছেই রাখতেন, যা মালিক পক্ষ তাদের ব্যবসায় খাটাতেন বলেও জানা গেছে। দীর্ঘ লেনদেনের সূত্রে এক সময় বড় অংকের ইউরো জমা হয়ে যায়। জানা গেছে, নিরাপদ ও জিম্মা হেফাজতের চিন্তায় গেল ঈদুল আজহার আগে তার কাছে আরও প্রায় ৬১ জন বাংলাদেশির লক্ষাধিক ইউরো জমা রাখেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের এক কোটি টাকার চেয়েও বেশি। ওয়াহিদ সেই ইউরোগুলোও তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিক লিটন মো. ইদ্রিস ও কুদ্দুস মিয়ার নিকট জমা রাখেন।

এ অবস্থায় গত ৭ জুলাই রাত থেকে ওয়াহিদের মোবাইল ফোন বন্ধ পায় স্বজনরা। মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে পরের দিন গ্রিসে থাকা ওয়াহিদের স্বজনরা সরেজমিনে ওই দোকানে গেলে দোকানের মালিক পক্ষ তাদের জানান, সে রাতে ঘুমিয়ে ছিল, সকালে তারা দেখতে পান সে ঘরে নেই। এ ছাড়া আর কোনো সুদুত্তর দিতে পারেনি মালিক পক্ষ। এ খবরে হতাশ হয়ে পড়েন ওয়াহিদের স্বজনরা। এক পর্যায়ে ঘটনার ৬ দিন পর স্থানীয় আখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেন নিখোঁজের মামা রমিজ মিয়া।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওয়াহিদ কর্তৃক জমাকৃত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আমানতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় লোভের বশীভূত হয়ে অর্থগুলো হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেন লিটন, ইদ্রিস, কুদ্দুস, সুলতান ও পলাশ মিয়াদের চক্রটি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াহিদকে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগ উঠেছে তিন ভাই ও তাদের দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে। এই খবরটি সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সকলেই আতংকিত হয়ে পড়েন এবং ওয়াহিদকে খুঁজে বের করার জোর দাবী জানান ।

ঘটনার খবর জানতে এ প্রতিনিধি মানোলদার লাপ্পা গ্রামে পৌঁছালে ওয়াহিদের স্বজনরাও এমনই বর্ণনা দেন এবং সাংবাদিকের উপস্থিতির খবরে সেখানে বসবাসরত শত শত বাংলাদেশিরা জড়ো হয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় আখাইয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তাৎক্ষনিক-ভাবে অভিযান পরিচালনা করে গ্রিক পুলিশ। এরপরই দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত সবাই।

পরে পুলিশ ওয়াহিদের কর্মস্থল ও বাসস্থান পরিদর্শন করেছে। এ সময় অভিযুক্ত কাউকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া এথেন্সের প্লাথিয়া ভাতিসে অবস্থিত তাদের আরেকটি দোকান রয়েছে অভিযুক্ত লিটনের। সেই দোকানটিও বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় লিটন।

এ ঘটনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য নিতে লাপ্পার ‘লিটন মিনি মার্কেটে’ গেলে দেখা যায় সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া এথেন্সের প্লাথিয়া ভাতিসে অবস্থিত মিনি মার্কেটে একাধিকবার গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান ওই ঘটনার পরপরই তালা দিয়ে পালিয়েছে লিটন।

এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘ধারণা করা যাচ্ছে জমাকৃত টাকার জন্য এমন ঘটনা হতে পারে।’ তিনি বলেন ‘তাকে খুঁজে পেতে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে আলোচনা করা এবং স্থানীয় থানায় গিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলা হয়েছে।’ তাকে খুঁজে পেতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের পক্ষ থেকে যা কিছু করা দরকার বা যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেখানেই যাবেন বলে আশ্বাস দেন কমিউনিটির সভাপতি।

এ ব্যাপারে এথেন্সে অবস্থিত দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলে- দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিৎ কুমার পাল ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশের সাথে সহযোগিতার কথা জানান। এ বিষয়ে জানতে লাপ্পার আখাইয়া থানায় গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিখোঁজ ওয়াহিদকে খুঁজে বের করতে তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এছাড়া দূতাবাস থেকেও তাদের বেশ কয়েকবার ফোন করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করার অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে হোয়াটসআপে অভিযুক্ত ইউনুস মিয়া ওরফে লিটন দাবি করেন, তাদের কেউই এই ঘটনার সাথে জড়িত নই। ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণে তাদের প্রতিপক্ষ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে আত্মগোপনে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন জানান, তারা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে গেছেন। তবে এইভাবে তাদের আত্মগোপন করা ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে জড়িতদের সনাক্ত করে ওয়াহিদকে উদ্ধার করাসহ আত্মসাৎকারীদের কবল থেকে প্রবাসীদের অর্থ উদ্ধার করে তা ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও গ্রিক প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সর্বশেষ - প্রবাস