ইউরোপের দেশ গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের লাপাস শহরে বসবাস করেন বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি। সম্প্রতি সেখানে এক বাংলাদেশি অভিবাসী গুম হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন ওই এলাকায় বসবাসরত অন্যান্য বাংলাদেশিরা।
লাপাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, লাপাসে আমি দশ বছর ধরে আছি। অনেক শান্ত পরিবেশ ছিল। কিছুদিন আগে একজন গুম হয়েছে। তিনি দোকানে চাকরি করতেন। কে বা কারা তাকে গুম করেছে আমরা জানি না।
তিনি বলেন, শুধু আমি না, আমরা যারা লাপাসে বাস করি প্রায় সব লোকই আতঙ্ক বোধ করি। আমাদের রাত-বিরাতে চলাফেরা করতে হয়। রাত দুইটা-তিনটা সময় যেতে হয়।
প্রায় ১২ বছর ধরে গ্রিসে অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি অভিবাসী রফিক জানান, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা আতঙ্কিত।
বাংলাদেশিরা জানান, গুম হওয়া ওয়াহিদ মিয়া একটি বাংলাদেশি দোকানে কাজ করতেন। সেই সঙ্গে তিনি হুণ্ডি ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিলেন।
লাপাসের বাংলাদেশি অভিবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, গুম হওয়ার পর ওয়াহিদের মামা স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। জানা গেছে, মামলা হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি দোকানি অর্থাৎ যে দোকানে ওয়াহিদ কাজ করতেন সেই দোকান মালিক ইউরোপের মতো একটি দেশে এভাবে গুম হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত বাংলাদেশিরা।
এদিকে লাপাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অভিবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই সেখানে কৃষিকাজে জড়িত। বাংলাদেশ থেকে বীজ এনে তারা নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন।
ভূমধ্যসাগরের দেশ গ্রিসের আবহাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মতো হওয়ায় সেখানে কৃষিক্ষেতে বাংলাদেশি সবজির উৎপাদন ভালো হয় বলে জানা গেছে।
লাপাসের বেশ কয়েকটি কৃষিজমিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সবজি যেমন লাউ, শিম, বরবটি, পটল, মিষ্টি কুমড়া ও কচুসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করছেন।
এই এলাকাটিতে প্রায় ১২ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন বাংলাদেশের ঝালকাঠি থেকে আসা অভিবাসী রফিকুল ইসলাম। বেশ কয়েক একর জমিতে তিনি বর্তমানে ২১ ধরনের বাংলাদেশি সবজির চাষ করছেন।
জানালেন, এসব সবজির বীজ তিনি বাংলাদেশ থেকে এনেছেন। তার খামারে বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ জন শ্রমিক কর্মরত। যারা সবাই বাংলাদেশি।
ডয়চে ভেলেকে রফিক জানান, এই সবজি রাজধানী এথেন্সের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা হয়। আর এ সবজির ভোক্তা মূলত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি অভিবাসীরা।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে গ্রিক সরকারের শ্রমিক আনার বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে বেশ আশাবাদী রফিক।
তার মতে, দেশটিতে চাকরির নানান সুবিধা রয়েছে যা বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য একটি সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। তবে বাংলাদেশিদের নির্বিঘ্নে ও কম খরচে গ্রিসে আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য তিনি সরকারকে আহ্বান জানান।
সূত্র: ডয়চে ভেলে/ইনফোমাইগ্রেন্টস