চলে এসেছে ইলিশের ভরা মৌসুম। দেশের উপকূলীয় জেলার সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে। এদিন নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে মাছ শিকারের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন উপকূলের জেলেরা। তবে মৌসুমের শেষ ভাগে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে নারাজ অনেকেই।
বরগুনার মহিপুরের একাধিক জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার, দাদনদার ও বরফকল মালিকরা জানান, প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। জেলেরা জানান, মাঝারি কিংবা বড় আকারের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত তারা। পাশাপাশি আড়তদার কিংবা দাদনদাররাও খুব একটা ঝুঁকি নিতে রাজি নন বলে জানান।
বরফকল মালিকরাও জানিয়েছেন, বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ানসহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুনতে হয়। মৌসুমের ৪ মাসে তারা আয় করে তা পুষিয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার দু’মাসেরও বেশি সময় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই বরফকল চালু করতে চাচ্ছেন না। তবে কুয়াকাটাসহ মহিপুর, আলিপুর গঙ্গমতি উপকূলের যে সকল জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যাবেন তারা ট্রলার মেরামত, নতুন জাল তৈরি ও পুরনো জাল সেলাইসহ সমুদ্রে মাছ ধরার সব কাজ শেষ করেছেন।
কুয়াকাটা আশার আলো পুনর্বাসন মৎস্যজীবী জেলে সমবায় সমিতি সভাপতি মো. নিজাম শেখ বলেন, অবরোধকালে যদি প্রতিবেশী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ না ধরে থাকে, তাহলে জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। আমাদের জেলেরা দেনা-পাওনা দিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সাগরে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় জেলেরা মাছ নিয়ে যাচ্ছে। সরকার আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। এভাবে জেলেরা এসে নিরাপদে মাছ ধরে নিয়ে গেলেও কেউ তা ঠেকায় নি।
দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলো মাছ শূন্য হয়ে পড়ায় মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে যে সামান্য মাছ ধরা পড়ছে তা চাহিদার সিঁকিভাগও নয়। তাই মাছের ভরা মৌসুমে মাছের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে মানুষ। সামান্য যে পরিমাণ মাছ আসছে তার দাম নাগালের বাইরে। গতকাল বরিশালের পোর্টরোডের বৃহৎ পাইকারি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে চাষের হাইব্রিজ জাতের মাছ ব্যতীত নদ-নদীর মাছ শূন্য প্রায়। ভরা মৌসুমে সিঁকিভাগও ইলিশ না মেলায় লোকসান ও আর দাদনের চিন্তার ছাপ একাধিক জেলের মুখে।
এদিকে ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে বরিশালে শুরু হয়েছে মৎস্য সপ্তাহ। শনিবার সকালে বরিশাল সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ইলিশ জাতীয় সম্পদ ও দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে দেশের জনগণকে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এবারের মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ মাছসহ দেশীয় প্রজাতির সব মাছ সংরক্ষণ, সুষ্ঠু বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে জেলেদের সচেতন করতে হবে। তারা যেন সরকারি আইন অমান্য করে মৎস্য আহরণ না করে। মৎস্য জাতীয় সম্পদ এ বিষয়ে জেলেদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং অবৈধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ থেকে বিরত না থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।