নুরুল আলম মাসুদ
পদ্মা সেতু চালুর পর ওই পথে চলাচলরত ফেরিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ি রুটের ফেরিগুলোর পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়াও পিরোজপুরের বেকটিয়া ও বরিশালের দপদপিয়া সেতু চালু হওয়ার ফলে সেই রুটেও ফেরিগুলো অন্য রুটে স্থানান্তর করা হবে। সেই সাথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটেও ফেরির সংখ্যা কমানো হবে বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী হাতিয়া কৃষি, মৎস্য এবং গবাদিপশুতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। সেই সাথে রয়েছে নিঝুম দ্বীপের মতো বহু দ্বীপ নিয়ে পর্যটন সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে নিঝুম দ্বীপ দেশের অন্যতম পযটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা তৈরি করেছে।
কিন্তু, মূল ভূখন্ডের সাথে নিঝুমদ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই বিপদসংকুল, ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। ফলে যোগাযোগের এই চ্যালেঞ্জ নিঝুম দ্বীপের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানতম প্রতিবন্ধকতা। দ্বীপের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি সী-ট্রাক থাকলেও সেটা বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। মানুষজনকে নির্ভর করতে হয় ট্রলার এবং স্পিডবোটের ওপর। এটি একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, সেই সাথে অনিরাপদ এবং কতিপয় গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত।
নিঝুম দ্বীপের ব্যাপক পর্যটন সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র যোগাযোগে সংকটের কারণে এটি পর্যটকবিমুখ হয়ে পড়ছে। আগ্রহী পর্যটকদের ঢাকা থেকে সোনাপুর, সেখান থেকে চেয়ারম্যানঘাট, সেখান থেকে সী-ট্রাকে হাতিয়া, হাতিয়া হতে জাহাজমারা, সেখান থেকে আবারো ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ যেতে হয়; অথবা ঢাকা থেকে সোনাপুর হয়ে চেয়ারম্যানঘাট, সেখান থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ যেতে হয়। এটি যেমন ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ, অনিরাপদ- সেই সাথে এটি অনেক বেশি কষ্টকর। তাই পর্যটকরা দিন দিন এই বিপুল সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন।
অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি মাছ হয় হাতিয়া উপজেলায়, এখানে গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় শুটকি প্রকিয়া এলাকা। খাদ্য উৎপাদনে হাতিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ, এর বাইরেও জেলার সবচেয়ে বেশি বাদাম হাতিয়ায় উৎপাদন হয়। কিন্তু, যোগাযোগ ব্যবস্থার জিম্মি অবস্থা এখানকার সকল সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করে রেখেছে।
সেই সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেখানে গড়ে উঠছে শক্তিশালী মোড়লিপনা। হানাহানি, রাজনৈতিক খুনখারাবি সময়ের সাথে সাথে ব্যাপকতা লাভ করেছে। ফলে হাতিয়া এখন জেলার সবচেয়ে বিপদজনক রাজনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
নিরাপদ এবং সুগম যোগাযোগ ব্যবস্থাই পারে হাতিয়ার এই সকল সমস্যার সমাধান করতে। যদি জেলার মুল ভূখন্ডের সাথে হাতিয়ার সহজ, নিরাপদ এবং নিয়মিত যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তাহলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে, কর্মসংস্থান, পযটনের প্রসার ঘটবে সেই সাথে রাজনৈতিক হানাহানি এবং দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে।
সেই ক্ষেত্রে পদ্মার দুইরুটের বেকার হয়ে যাওয়া ফেরিগুলো থেকে কয়েকটি ফেরি চেয়ারম্যানঘাট-হাতিয়া ও হাতিয়া থেকে ভোলার মনপুরার মধ্যে চালু করা যেতে পারে। একই সাথে, পদ্মার দুই রুটে পারাপারের জন্য ব্যবহৃত লাইটার লঞ্চগুলোও নোয়াখালী-হাতিয়ার মধ্যে যাতায়তের নতুন উপায় হতে পারে।
ধারণা করছি, বিআইডব্লিউটিসি এই মুহুর্তে পদ্মার দুই রুট, বেকটিয়া ও দপপদপিয়া মিলে প্রায় ৩০টি ফেরির জন্য নতুন রুট চিহ্নিত করার বিষয়ে কাজ করছে। হাতিয়ার সাথে নোয়াখালী এবং ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে এই দুটো রুটে ফেরি সংযোজনের বিষয়ে হাতিয়া মাননীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি।