রাজধানীর বেশির ভাগ যাত্রীছাউনি অবৈধভাবে দখল নিয়ে বসানো হয়েছে দোকান বায়তুল মোকাররম। মসজিদের সামনে থেকে তোলা ছবি। ছবি: সোহেল।
রাজধানীর বেশির ভাগ যাত্রীছাউনি অবৈধভাবে দখল নিয়ে বসানো হয়েছে দোকান বায়তুল মোকাররম। মসজিদের সামনে থেকে তোলা ছবি। ছবি: সোহেল।
কোথাও বসেছে দোকান, কোথাও আবার ছাউনি থাকলেও নেই যাত্রীদের বসার বেঞ্চ। কিছু জায়গায় বেঞ্চ থাকলেও যাত্রীদের জন্য থামছে না সেখানে গাড়ি। এটি রাজধানীর বেশির ভাগ যাত্রীছাউনির চিত্র। যাত্রীদের নির্ধারিত স্থান থেকে বাসে উঠানামা ও যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য এসব যাত্রীছাউনি তৈরি করা হলেও বেশির ভাগ যাত্রীছাউনি এখন অকার্যকর। ঠিকমতো বাসগুলো ছাউনিতে থামছে না। এতে যে উদ্দেশ্যে এসব ছাউনি বা বাস-বে তৈরি করা হয়েছে তাতে কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সিটি করপোরেশন এসব যাত্রীছাউনি তৈরি করলেও বাস থামা ও বাস থেকে উঠানামার তদারিক করার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু বেশির ভাগ বাসই তা মানছে না। পুলিশ বলছে, বাসগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে নির্ধারিত স্থানে থামছে না। এ বিষয়ে তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, বাসগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে তারা নির্ধারিত স্থানে থামছে না। আমাদের এ বিষয়ে বাসমালিক ও বাসের চালকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরেও তারা বেশির ভাগই ভঙ্গ করছে। অন্যদিকে কিছু কিছু যাত্রী এখনো যাত্রীছাউনি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে না। দুই দিকেরই সচেতনতা দরকার। তাহলে একটি সুন্দর ব্যবস্হা গড়ে উঠবে। এ বিষয়ে যাত্রী ও বাস কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা যাত্রীছাউনি অনুযায়ী বাসসার্ভিস নিশ্চিত না করবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রাজধানীতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অধীনে ঢাকায় যাত্রীছাউনি রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের বিশ্রাম এবং বাসে উঠানামার জন্য এসব ছাউনি নির্মাণ করা হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা, নজরদারির অভাবে হকার ও মাদকসেবীদের দখলে এগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য। বেশির ভাগ যাত্রীছাউনির বিভিন্ন অংশ খুলে নিয়ে গেছে মাদকাসক্ত ও ভবঘুরেরা। অধিকাংশ ছাউনিতেই প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান। দূর থেকে দোকান না-কি যাত্রীছাউনি তা বুঝার উপায় নেই। সরেজমিনে মগবাজার, শাহবাগ, আজিমপুর, বায়তুল মোকাররাম মসজিদ এলাকা, মহাখালী, বনানী, উত্তরাসহ বেশ কিছু যাত্রীছাউনি ঘুরে দেখা গেছে, এসব যাত্রীছাউনির সামনে বাস স্টপেজ থাকলেও, সেখানে বাস থামে না। যাত্রীছাউনির আগে বা পরে বাস দাঁড়ায়। এ জন্য যাত্রীরাও ছাউনিতে না দাঁড়িয়ে অন্য জায়গাতেই অপেক্ষা করেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের যাত্রীছাউনিতে দেখা যায়, সেখানে কাপড়ের দোকান ও বাস টিকিট বিক্রির কাউন্টার দিয়ে বসেছে। এটি কোনো যাত্রীছাউনি তা দেখে বুঝার উপায় নেই। যাত্রীছাউনিতে দোকানের বিনিময়ে তারা মাসিক টাকা দেন বলেও জানান। তবে কাকে টাকা দেন তারা বলতে রাজি হননি।
যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত স্থানে বাস থামান না চালকেরা। তাই তারাও বাধ্য হয়ে সড়কের ওপরে অপেক্ষা করেন। ফলে আগের মতোই যত্রতত্র বাস থামে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে উঠানামা করেন তারা। এতে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে বাসমালিক ও পুলিশের আরো তৎপর হওয়ার কথা বলেন তারা।
রাজধানীতে যাত্রীছাউনি এভাবে কার্যকর না থাকলেও ডিএসসিসি নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের অধীনে রাজধানীতে যাত্রীসেবা বৃদ্ধিতে ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রীছাউনি নির্মাণ করে। অন্যদিকে ডিএনসিসি এলাকায়ও ২০১৮ সালে প্রায় ১২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়। ডিএনসিসির প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, এখনো ডিএনসিসি এলাকায় প্রায় ৫০টি যাত্রীছাউনির কাজ চলছে। এসব বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এবং কেইস প্রকল্পের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যাত্রীদের কল্যাণে বিভিন্ন সড়কে যাত্রীছাউনি তৈরি করেছি। তা তদারকি করার জন্য আমাদের প্রকৌশলী বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। তবে বাস থামা-না থামাসহ সড়কের শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।