বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনকে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার কোনো কারণ নেই। অমিক্রনে আক্রান্ত হয়েও মানুষ মারা যাচ্ছেন বলে সতর্ক করেছে তারা। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে সতর্ক করেন। খবর এএফপির।
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯৫ লাখ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এটি রেকর্ড সংখ্যক। গত সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ শতাংশ বেশি। এত দিন বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, করোনার নতুন ধরন অমিক্রন ডেলটার চেয়ে বেশি সংক্রামক হলেও তা কম প্রাণঘাতী।
তবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও প্রধান তেদরোস সতর্ক করে বলেছেন, করোনার অতিসংক্রামক ধরন অমিক্রনকে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, দেখা গেছে, ডেলটার তুলনায় অমিক্রন কম মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সংক্রমণ মারাত্মক হয়নি। তবে এর মানে এই নয় যে অমিক্রনকে মৃদু ক্ষতিকর বলে ভাবতে হবে। করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর মতোই অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে, মৃত্যুও হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে এত দ্রুত সময়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন যে তা সামাল দিতে বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে।
তেদরোস চেয়েছিলেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ প্রতিটি দেশ তাদের জনসংখ্যার ১০ শতাংশকে আর ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ৪০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করবে।
তবে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বেঁধে দেওয়া সে লক্ষ্য অনেক দেশই পূরণ করতে পারেনি। ডব্লিউএইচওর ১৯৪টি সদস্যদেশের মধ্যে ৯২টি দেশই ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ৩৬টি দেশ ১০ শতাংশ মানুষকেও টিকা দিতে পারেনি। এর বড় কারণ প্রয়োজনীয়সংখ্যক টিকার ডোজ হাতে না পাওয়া।
কোভিডের কারণে মৃত্যু ও বিপর্যয় ঠেকাতে ২০২২ সালে আরও বেশি নিরপেক্ষভাবে সব দেশের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তেদরোস। তিনি চান, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিটি দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করবে।
তেদরোস বলেন, টিকাপ্রাপ্তির অসমতার কারণে মানুষ মারা যাচ্ছেন, চাকরি হারাচ্ছেন এবং তা বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কোটি কোটি মানুষকে অরক্ষিত রেখে গুটিকতক দেশে বুস্টারের পর বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে তাতে মহামারির অবসান হবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল হেড মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেছেন, মহামারি শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত অমিক্রনই যে করোনাভাইরাসের ‘শেষ উদ্বেগের ধরন’ হয়ে থাকবে, তা নয়।
অমিক্রন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে করোনাবিধি মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মারিয়া। সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
মারিয়া বলেন, নাক ও মুখ ঢেকে রাখবে এমন মাস্ক পরতে হবে। চিবুকের নিচে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখাটা অর্থহীন।