মঙ্গলবার , ৩১ মে ২০২২ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অস্ট্রেলিয়া
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আফ্রিকা
  6. আবহাওয়া
  7. আমেরিকা
  8. আয়ারল্যান্ড
  9. ইউক্রেন
  10. ইউরোপ
  11. ইতালি
  12. কানাডা
  13. খেলাধুলা
  14. গ্রাম বাংলা
  15. চিত্র বিচিত্র

লুৎফুর রহমানের জয় নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে কেন এত আলোড়ন?

প্রতিবেদক
Probashbd News
মে ৩১, ২০২২ ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

Spread the love

লন্ডনের মতো এক বিশাল নগরীর কেবল একটি এলাকার পৌর নির্বাচনের ফল এবার যেভাবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের নজর কেড়েছে তেমনটি সচরাচর দেখা যায় না।

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনে মেয়র পদে এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিক লুৎফুর রহমানের প্রত্যাবর্তন এখানকার রাজনীতিতে বড় ধরণের অঘটন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। কেউ কেউ তো এটিকে ব্রিটেনের সাম্প্রতিক নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে অসাধারণ ঘটনা বলে বর্ণনা করছেন।

সাত বছর আগে লুৎফুর রহমানকে নানা অনিয়মের অভিযোগে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ৫ বছরের জন্য তার কোন নির্বাচনে দাঁড়ানোই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ এবারের নির্বাচনে যেরকম বিপুল ব্যবধানে বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের হতবাক করে দিয়েছে।

“কেমন করে এটা সম্ভব হলো? আমি রীতিমত বিভ্রান্ত, আমাকে বুঝতে সাহায্য করুন”- ব্রিটেনের একটি টেলিভিশন টক শোতে উপস্থাপক দর্শকদের দিকে এরকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন।

“যে রাজনৈতিক দলের কোন ওয়েবসাইট নেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন তৎপরতা নেই, যাদের দৃশ্যমান কোন নির্বাচনী প্রচারণা নেই, দলীয় তহবিল নেই- কীভাবে তারা নির্বাচনে জিতে একটি কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল? এটা কেমন করে সম্ভব?”, প্রশ্ন তোলেন ব্রিটেনের একজন ডানপন্থী রাজনীতিক এবং টক টিভির উপস্থাপক রিচার্ড টাইস।

লুৎফুর রহমান এবং তার ‘অ্যাসপায়ার’ পার্টির এই বিজয় নিয়ে যুক্তরাজ্যের মূলধারার গণমাধ্যমে এত প্রশ্ন, এবং এত বিচার-বিশ্লেষণের কারণও আছে।

‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’
সাত বছর আগে মনে করা হয়েছিল, লুৎফুর রহমানের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে গেছে।

টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদে সরাসরি ভোটে দুই দুই বার নির্বাচিত হওয়ার পরও নির্বাচনে প্রতারণা এবং কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনায় নানা রকম অনিয়মের অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও গত ৫ই মের নির্বাচনে তিনি এবং তাঁর দল যেরকম বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের ক্ষমতায় ফিরে এলেন, তাকে একটি ছোটখাটো রাজনৈতিক ভূমিকম্পই বলতে হবে।

নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হন প্রায় ৪১ হাজার ভোট পেয়ে, যা মোট প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৫৫ শতাংশ। তাঁর দল অ্যাসপায়ার পার্টি প্রার্থীরা ২৪টি কাউন্সিলর পদে জয়ী হন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯টিতে।

এর মানে হচ্ছে, টাওয়ার হ্যামলেটসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন মিস্টার রহমান এবং তাঁর দল অ্যাসপায়ার পার্টির হাতে।

টাওয়ার হ্যামলেটস এখন লন্ডনের দ্রুত বিকাশমান একটি এলাকা। বিশ্বের অর্থ এবং পুঁজি-বাজারের অন্যতম বড় একটি কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয় সিটি অব লন্ডনকে। সেই সিটি এখন ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী টাওয়ার হ্যামলেটসের দিকে, আর এই কাউন্সিলের মধ্যেই পড়েছে ক্যানারি হোয়ার্ফ, যেটি আগে থেকেই ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোার বড় কেন্দ্র। সব মিলিয়ে এটি লন্ডনের অর্থনীতির এক বড় চালিকা শক্তি এবং এই কাউন্সিলের কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই উদগ্রীব।

লন্ডনে মাত্রই ‘এলিজাবেথ লাইন’ বলে যে নতুন ট্রেন লাইন চালু হয়েছে, সেটি গেছে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার ভেতর দিয়ে, এবং এই নতুন রেল সংযোগ পুরো এলাকাটিকে আগামী কয়েক বছরে আরও আমূল বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পলিটিক্যাল হাইবারনেশন থেকে লুৎফুর রহমান যেভাবে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারের নির্বাহী মেয়র হয়ে ফিরে আসলেন, তাতে একেবারে হতবাক হয়ে গেছেন আজমল হোসেন। মিস্টার রহমানের বিরুদ্ধে যে চারজন মিলে নানা ধরণের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন, তিনি তার একজন।

আজমল হোসেন নিজে লেবার পার্টির একজন সক্রিয় কর্মী, লন্ডনের বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র ব্রিক লেনে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক।

“আমি খুব দুঃখিত হয়েছি যে কারণে, এই ফলের পর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মনে করবে, যে যাই করুক না কেন …নির্বাচনে পাশ করতে কোন অসুবিধা নেই.. নৈতিকতার কোন দরকার নেই। এটা আমাদের কমিউনিটির জন্য খুব নেতিবাচক”, বলছিলেন তিনি।

‘অবিচারের জবাব’
তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং গণমাধ্যম যত অভিযোগই তুলুক, লুৎফুর রহমান বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত সপ্তাহে মেয়রের দফতরে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল।

আজমল হোসেন (সর্বডানে) ছিলেন লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম বাদী
ছবির ক্যাপশান,
আজমল হোসেন (সর্বডানে) ছিলেন লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম বাদী

তাঁর প্রতি যে আসলেই অবিচার করা হয়েছিল, তাঁকে যে অন্যায়ভাবে মেয়রের পদ থেকে সরানো হয়েছিল, এবারের নির্বাচনী ফলকে তাঁরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন তিনি।

“আমাকে এবং আমার প্রশাসনকে ২০১৫ সালের ২৩শে এপ্রিল যেভাবে কাউন্সিল থেকে সরানো হয়েছে, সেটা নিয়ে জনগণ খুবই অসন্তুষ্ট ছিল। এই পৌর এলাকার জনগণ, ৩৮ হাজার মানুষ, ৩৮ হাজার- তারা ২০১৪ সালে ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র করেছিলেন। আমাদের দলের ১৮ জনকে তারা কাউন্সিলরও নির্বাচিত করেন। আর গত ৫ মের নির্বাচনে প্রায় ৪১ হাজার মানুষ আমাকে আবার ভোট দিয়ে মেয়র করেছেন, আর এবার আমাদের দলের ২৪ জন কাউন্সিলর হয়েছেন। আপনি কি এখানে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছেন? আমার ভোট কমেনি, বরং আরও বেড়েছে।”

কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছিল, সেটা তো খুবই স্পষ্ট এবং সেই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল পর্যন্ত করেন নি – প্রশ্ন করেছিলাম আমি।

“এটা কিন্তু কোন রায় ছিল না। এটা ছিল নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমাকে কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এটা ছিল একটা দেওয়ানি ব্যাপার। এটা রায় ছিল না, এটা ছিল একটা রিপোর্ট। এর বিরুদ্ধে আমি জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য আপিল করেছিলাম। কিছু বিষয়ে আমাকে আপিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে, কিছু বিষয়ে দেয়া হয়নি। আর মামলা লড়তে গিয়ে আমি প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। সেজন্যে আর আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই নি,” – ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি।

‘রাজনৈতিক ক্যারিশমা’
লুৎফুর রহমান বেড়ে উঠেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসেই, নিজেকে তিনি বর্ণনা করছেন “এই এলাকারই একজন ছেলে” হিসেবে। তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন লেবার পার্টিতেই, এবং স্থানীয় লেবার পার্টিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। তাকে দলের মধ্যে একজন সম্ভাবনাময় উদীয়মান তারকা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২০১০ সালে তিনি লেবার পার্টির মনোনয়ন পান, কিন্তু পরে পার্টি তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে। তখন তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেব স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ২০১৪ সালে তিনি আবারও পুন-নির্বাচিত হন মেয়র পদে।

“লুৎফুর রহমান খুব ক্যারিশম্যাটিক একজন নেতা, তিনি জনগণের হৃদস্পন্দন বুঝতে পারেন, বিশেষ করে বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী, যাদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করেন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার, তাদের অনুভবের জায়গাটা তিনি বুঝতে পারেন”, বলছেন বাংলাদেশি সাংবাদিক বুলবুল হাসান। লেবার পার্টির একজন সাবেক যোগাযোগ উপদেষ্টা হিসেবে তিনি পূর্ব লন্ডনের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন।

টাওয়ার হ্যামলেটসের মোট বাসিন্দার ৩২ শতাংশই বাংলাদেশি। ভোটার হিসেবে কোন একক গোষ্ঠী হিসেবে তারাই সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকারের রাজনীতিতে বাংলাদেশিরা খুবই সক্রিয়।

বুলবুল হাসান মনে করেন, এদের সমর্থনই ছিল লুৎফুর রহমানের সবচেয়ে বড় শক্তি।

“নির্বাচনে ভোট আকর্ষণের জন্য সম্প্রদায়-ভিত্তিক একটি প্রচারণা ছিল লুৎফুর রহমানের দলের দিক থেকে। বাঙ্গালি মুসলমান পরিচয়টি কিন্তু এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। মূলধারার দল হিসেবে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে এধরণের প্রচারণা চালানো মুশকিল ছিল। কাজেই আমি বলবো এখানে অ্যাসপায়ার পার্টি বা লুৎফুর রহমান একটা সুবিধা পেয়েছেন।”

“আর বাঙালিরাও মনে করেছেন, বাঙালি বা মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে লুৎফুর রহমানকে তাদের দরকার”, বলছিলেন তিনি।

টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটের রাজনীতিতে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বাংলাদেশি ভোটাররা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন

তবে অ্যাসপায়ার পার্টি এবং লুৎফুর রহমান তাদেরকে কেবলমাত্র একটি মাত্র সম্প্রদায়ের দল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মিস্টার রহমান বলছেন, যে বিপুল বিজয় তারা পেয়েছেন, তাতে প্রমাণিত হয়, এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের সমর্থনই তাদের পেছনে ছিল।

“এটা একদমই বাজে কথা। একদম অসত্য। ৪১ হাজার মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে আমাদের অতীতের রেকর্ড দেখে, আমাদের নীতি এবং প্রতিশ্রুতি দেখে। এই দেশে একমাত্র আমরাই বিনামূল্যে ঘরে গিয়ে মানুষের সেবাযত্নের সুবিধা চালু করেছি। এটা কি কেবল একটা সম্প্রদায়ের জন্য ছিল? এটা ছিল সবার জন্য, যাদের এরকম সেবা-যত্নের দরকার ছিল।”

“আমরা প্রাথমিক স্কুলের সব শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলে বিনামূল্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এটা তো সবার জন্য, জাতি-ধর্ম-লিঙ্গের ভিত্তিতে কোন বৈষম্য তো এখানে ছিল না। এসব কথা যারা বলে, তাদের একটা এজেন্ডা আছে। আমি বলবো, এদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণ আসলে এদের কথায় বিভ্রান্ত হয়নি”, বলছিলেন তিনি।

নির্বাচনে তাঁর দলের বিপুল বিজয়কে তিনি ব্যাখ্যা করছেন তাদের সফল নির্বাচনী কৌশল এবং ব্যাপক গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়ে।

নির্বাচনী কৌশল
মি. রহমান বলছিলেন, “আমরা আমাদের কাজ শুরু করি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এবং তখন থেকেই আমরা আমাদের প্রচারণা চালিয়ে গেছি। এটা সত্যি যে, আমাদের প্রচারণা খুব নজর-কাড়া ছিল না, আমরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এই প্রচারণা চালাইনি। সেটাই ছিল আমাদের কৌশল, সেটা আমরা ইচ্ছে করেই করেছি।”

“আমরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি, তাদের দরজায় কড়া নেড়েছি, কথা বলেছি, রাস্তায়-বাজারে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি সম্ভবত বেশিরভাগ ভোটারের বাড়ি তিনবার করে গিয়েছি। প্রচারণা চালাতে চালাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম”, বলছিলেন তিনি।

২০১৫ সালে লুৎফুর রহমানকে মেয়রের পদ থেকে যেভাবে সরানো হয়েছিল, এবং মূলধারার গণমাধ্যমে তাকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশি ভোটারদের অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আবু হোসেন এর মধ্যে বর্ণবাদ এবং ইসলাম-বিদ্বেষের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন।

“দেখুন, টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে একটা স্থানীয় পরিষদ। কিন্তু আপনি দেখবেন, এখানকার মূলধারার গণমাধ্যমে এর খবর কত ফলাও করে দেয়া হয়। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও এটা দেখা গেছে। যেভাবে জাতীয় পর্যায়ে মন্ত্রী-মিনিস্টার থেকে শুরু করে মূলধারার গণমাধ্যমে এখানে জড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে বোঝা যায় এরা চায় না একজন বাঙ্গালি বা মুসলিম কাউন্সিলের নেতৃত্বে থাকুক। ইসলাম-বিদ্বেষ ছিল বলেই এটা ঘটেছে। লুৎফুর রহমান যেহেতু একজন বাঙ্গালি এবং মুসলিম, সেজন্যে ইসলামোফোবিয়া কাজ করছে এখানে। এটা একদম পরিষ্কার।”

তবে গত কয়েক বছরে সাবেক মেয়র জন বিগস এবং তার নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি যেভাবে কাউন্সিল পরিচালনা করেছে, সেটা নিয়েও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন অনেক ভোটার।

লেবার সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ
সাবেক মেয়র জন বিগস: লেবার পার্টির নীতির সমালোচনা করেছেন দলের অনেক সমর্থক
ছবির ক্যাপশান,
সাবেক মেয়র জন বিগস: লেবার পার্টির নীতির সমালোচনা করেছেন দলের অনেক সমর্থক

লিন্ডা উইলকিনসন লেবার পার্টির সমর্থক হলেও এবার তিনি ভোট দিয়েছেন লুৎফুর রহমানকে। বিবিসির নিউজনাইট অনুষ্ঠানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিস্টার রহমানের বিপুল বিজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি।

“আমার মনে হয়, তিনি যে এত বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন, তার কারণ হচ্ছে, তিনি আগের মেয়াদে যা করেছিলেন তার জন্য। তার আমলে তরুণদের জন্য ৪৮টি কেন্দ্র ছিল, এখন আছে মাত্র আটটি। তার আমলে বয়স্কদের জন্য সোশ্যাল কেয়ার দেয়া হতো বিনামূল্য, এখন এটির জন্য অর্থ দিতে হয়। আমি এরকম আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারি।”

“আমার মনে হয়, লোকে তুলনা করে দেখেছে, লুৎফুর রহমানের আমলে আমরা কী পেতাম, আর জন বিগসের আমলে কী পেয়েছি। লোকজন বলেছে, যথেষ্ট হয়েছে, আর না।”

টাওয়ার হ্যামলেটসের একজন বাসিন্দা সালিম হোসেনও লুৎফুর রহমানকে ভোট দিয়েছেন তার অতীতের রেকর্ড দেখে।

“২০১৫ সালের আগে যখন উনি টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র ছিলেন, তখন উনি হাউজিং বিষয়ে অনেক কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষও দেখেছে এই কাজগুলো। আর উনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, সেগুলো আমি পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। আমরা দেখেছি এখানে অনেকগুলো বিষয় সরকার প্রমাণ করতে পারেনি। আর সাধারণ মানুষ মনে করে এই অভিযোগের অনেকগুলো মিথ্যা।”

টাওয়ার হ্যামলেটসে সাবেক মেয়র জন বিগস এবং তার প্রশাসন যেসব নীতি নিয়েছিলেন, তা যে লেবার পার্টির অনেক সমর্থককে ক্ষুব্ধ করেছে, সেটা এখন দলের অনেক নেতাও খোলাখুলি স্বীকার করছেন। বিবিসির তরফ থেকে জন বিগস এবং লেবার পার্টির আরও ক’জন নেতার সঙ্গে কয়েক বার যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ সাড়া দেননি।

মেয়র লুৎফুর রহমান এখন তার নতুন প্রশাসন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব একেবারেই নেই বলে যে সমালোচনা সেটা পুরোপুরি স্বীকার করতে রাজী নন তিনি। তবে তার প্রশাসনিক টিমে নারীরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবেন সেরকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনে চমক লাগানো সাফল্য সত্ত্বেও তাঁর দল অ্যাসপায়ার যে কেবলই একটি স্থানীয় পার্টি, সেটি স্বীকার করছেন তিনি।

তবে অ্যাসপায়ার ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের রাজনীতির বাইরে জাতীয় রাজনীতিতে গিয়ে আলাদাভাবে প্রার্থী দাঁড় করাবে কিনা, অথবা তিনি নিজে ভবিষ্যতে লেবার পার্টিতে আবার ফিরে যাবেন- এমন সম্ভাবনা দেখেন কিনা- এই দুটি প্রশ্নেরই সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেলেন তিনি।

“লেবার পার্টি দিয়ে আমি রাজনীতি শুরু করি, লেবার পার্টির সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই। একটি ক্ষুদ্র চক্র আমাকে দল থেকে বের করার চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সেসব এখন আমি পেছনে ফেলে এসেছি। ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারে।”

লুৎফুর রহমান বলছেন, তিনি এখন বরং তার ভোটারদের কাছে দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নেই বেশি মনোযোগ দিতে চান।

“মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেছে, তারা আমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে তাদের সেবা করার, এবং আমরা বিশ্বস্ত-ভাবেই তাদের সেবা করবো। টাওয়ার হ্যামলেটসকে আবার আমাদের নতুন করে সাজাতে হবে, আমাদের ভবিষ্যৎকে নতুন করে তৈরি করতে হবে”, বলছেন তিনি।

সর্বশেষ - প্রবাস