পানের স্বাদ বাড়াতে জুড়ি নেই এই খয়েরের। কিন্তু এই খয়ের কী প্রক্রিয়ায় হয়, সে খবর নিশ্চয়ই অনেকে রাখেন না।
জেনে রাখা ভালো খয়ের কোনো কেমিক্যাল কিংবা খনিজ উপাদান নয়। এটি উৎপাদিত হয় একটি বিশেষ গাছের রস থেকে। যার বৈজ্ঞানিক নাম Acacia catechu)। এই গাছের উচ্চতা ১৫ ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। একেকটি গাছ পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ বছর।
খয়ের গাছ কেটে প্রথমে ছোট ছোট টুকরো করা হয়। সেই টুকরোগুলো ১২-১৫ ঘন্টা ধরে পানিতে জাল দেয়ার পর রাখা হয় নির্দিষ্ট ছাঁচে। ঠান্ডা হলে তৈরি হয় খয়ের।
বাংলাদেশে খয়ের শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে রাজশাহীর চারঘাট এলাকায়। এরপর পাকিস্তান থেকে আসা বিহারীদের মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটে।
চারঘাট উপজেলার গোপালপুর ও বাবুপাড়া গ্রামে অবস্থিত বেশিরভাগ খয়ের কারখানা। শুরু থেকেই এখানে উৎপাদিত খয়ের দেশের রাজধানীসহ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে।
খয়ের গাছ প্রধানত: এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ভারত পাকিস্তান, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
শুধু পানের স্বাদ বাড়াতে নয় খয়ের গাছের বীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এর পাতা এবং ডাল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গলার ঘা সারাতে কিংবা ডায়েরিয়া রোগের ওষুদ হিসেবে ব্যবহার হয় খয়ের।
খয়ের গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এছাড়াও এর কাঠ দিয়ে তৈরি হয় নানান আসবাবপত্র।
খয়ের গাছের গুঁড়ির কেন্দ্রীয় অংশের কাঠ থেকে যে ট্যানিন নিষ্কাশন করা হয়, সেটি ব্যবহার করা হয় কপড়ের রং হিসেবে। একই সাথে মাছ ধরার সুতি জালকে টেকসই করতে খয়েরের দ্রবণে চুবিয়ে রাখতে দেখা যায়।
খয়ের ব্যবহার হয় বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে এমনকি খনিজ তেল ড্রিলিং-এর কাজে তেলের সান্দ্রতা সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় খয়ের।
বিবিধ উপকারে আসা খয়েরের বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ৫-৬ মাস নার্সারিতে চারা হিসেবে রাখা হয়। এরপর মাঠে বপন করা হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং মালয়েশিয়াতে পান খাওয়ার মসলা হিসেবে প্রচলিত এই খয়ের।