দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের গ্রেফতারের খবরে তার গ্রামের বাড়িতে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত প্রণবেন্দু হালদার। পিকে হালদার পরিবারের বড় ছেলে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পিকে হালদারের বাবা প্রণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন দর্জি। মা লীলাবতী হালদার ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। পিকে হালদার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের জুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে ভিন্নধর্মের এক নারীকে বিয়ে করার পর থেকে পিকে হালদার গ্রামছাড়া। তার এই অর্থপাচারের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষিকা মা আরেক ছেলে প্রীতিশ হালদারের বাড়ি ভারতের অশোকনগরে চলে যান। পিকে হালদারের আরেক ভাই প্রাণেশ হালদারও কানাডায় অবস্থান করছেন বলে এলাকা থেকে জানা গেছে।
সরেজমিন পিকে হালদারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই। পুরনো পৈতৃক ভিটায় রয়েছে ভাঙা টিনের ঘর। নিজ এলাকার জন্য করেননি তেমন কিছুই। তাই স্থানীয়দের মধ্যে পিকের জন্য রয়েছে তীব্র ঘৃণা।
দীঘিরজান গ্রামে তার এক প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষক অধ্যক্ষ দীপ্তেন মজুমদার জানান, প্রশান্ত হালদারকে একজন মেধাবী ছাত্র বলে এলাকাবাসী চিনত। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সঙ্গে তার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। মানুষ জানত তিনি অনেক বড় চাকরি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন বলে গ্রামে প্রচার রয়েছে। ভিন্নধর্মের মেয়েকে বিয়ে করায় তিনি ধর্মত্যাগী হয়েছেন এরকম খবর ছিল। কুষ্টিয়ায় একটি জুট মিলসহ তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল বলে মানুষ জানে। অঙ্গন হালদার নামে নিজ গ্রামের জনৈক ব্যক্তি ম্যানেজার হিসেবে পিকে হালদারের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করেন।
দীঘিরজান গ্রামে মা লীলাবতীর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন পিকে হালদার, তার তত্ত্বাবধায়ক অঙ্গন হালদার। বর্তমানে পিকে হালদারের গ্রামের বাড়িতে পুরনো একটি কাঠের ঘর রয়েছে, যেখানে তার চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার বসবাস ও দেখাশোনা করেন। দীঘিরজান গ্রামে ওই বাড়িতে গেলে পিকে হালদারের চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার জানান, তারা এই বাড়ি দেখেশুনে রাখেন। কিন্তু প্রশান্ত বা তার ভাইরা কেউই তাদের খোঁজখবর রাখেন না। পিকে হালদারের এই কেলেঙ্কারির খবর শোনার পর তারাও অনেক ভয়ে আছেন। শনিবার ভারতে পিকে হালদারের গ্রেফতারের খবরে তার নিকটজনের মধ্যে নতুন করে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের।