বিএনপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে মনোনয়ন চাইবেন। আর তা না হলে প্রস্তুতি আছে স্বতন্ত্র ভোট করারও। আসছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে এমন মতামত বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ দলের বেশ ক’জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর। অন্যদিকে, কেন্দ্র বলছে, ক্ষমতাসীনদের অধীন কোন নির্বাচন নয়, দলের এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক শাস্তিই তার একমাত্র প্রাপ্য।
সবশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে ভোট করায় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়। সেই ক্ষত শুকানোর আগেই দরজায় কড়া নাড়ছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আসছে ১৫ ই জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এতে অংশ নিতে দলের শেষ কথা শোনার অপেক্ষায় বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে স্থানীয় নেতাদের সাথে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে, কেন্দ্রের নেতারা বলছেন, দলের নির্দেশ অমান্য করলে কাউকে ছাড় নয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তারা তাদের নিজেদের দায়িত্বে তা নেবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০১২ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট করে প্রথম মেয়র হয়েছিলেন সাক্কু। ২০১৭ সালে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করে ফের মেয়র হন তিনি।
বর্তমানে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। তার ওপর দীর্ঘ ১০ বছর পর কুসিকে ফের ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।
২০১৭ সালের কুসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনমুখী হয়। এমনকি সাক্কুকে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক দিলে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানাকে হারিয়ে ফের মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় প্রথবারের মতো দলীয়ভাবে এই সিটি নির্বাচন হয়।
গত ২৫ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো এই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এই অবস্থায় সাক্কু সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এবারও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। তার দল মনোনয়ন না দিলে, বা নির্বাচন বর্জন করলে তিনি স্বতন্ত্র থেকেই প্রার্থী হবেন।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব এ বিষয়ে জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ১২ অনুযায়ী, স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হতে হলে ৩০০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর ও তথ্যাদি জমা দিতে হয়। সেখান থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে পাঁচজন সমর্থকের সত্যতা যাচাই করা হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ইতোপূর্বে বাতিল হয়েছে।
আর মেয়র সাক্কু যদি কোনো দলের মনোনয়ন না পান, তবে তাঁকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। কেননা, তিনি মেয়র হিসেবে পূর্বে নির্বাচিত হয়েছেন।
বিধি ১২-তে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মেয়র পদে ইতোপূর্বে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার জন্য ৩০০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর ও তথ্যাদির তালিকা দাখিল করার প্রয়োজন হবে না।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ মে ও মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২০-২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৩-২৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৭ মে।
২০১১ সালে দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে গঠন করা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নামে নতুন একটি করপোরেশন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে ওই বছরই প্রথম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এরপর ২০১৭ সালে এসে এ সিটির পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিনগুণ। কুমিল্লা সিটি করপোরেশ ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। সর্বশেষ নির্বাচনে এ সিটিতে ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন।