বাজারে সংকটের মধ্যেই সয়াবিন তেলের দাম আবারও বেড়েছে লিটারে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা। এখন এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৮০ টাকা। আর প্যাকেটজাত তেলের দাম ৩৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ১শ’ ৯৮ টাকা লিটার। যা কার্যকর হচ্ছে আজ থেকেই।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও উৎপাদনকারীদের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের বৈঠকে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। যেখানে নতুন করে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়। দাম বাড়ানোর ফলে ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ৯শ’ ৮৫ টাকা। আর সুপার পামওয়েল খোলার লিটার দাম হচ্ছে ১শ’ ৭২ টাকা। এরিমধ্যে গেল সোমবার ২ কোটি ২৯ লাখ লিটার সয়াবিন তেল দেশে এসেছে। এছাড়া ১৩ হাজার টন পামওয়েল আসার কথা রয়েছে।
অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম চারবার উঠানামা করল। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বেড়েছে, কমেছে একবার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা অজুহাতে বেশ কিছু দিন ধরেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। এ অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। এর আগে এলসি কমিশন ও মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়। এরপরও বাজারে তেলের দাম কমেনি। তখন সরকার ২০ মার্চ তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা থেকে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ওই দামে বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। দাম নির্ধারণের পরও প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ফের দাম বাড়ানো হলো। নতুন করে বেঁধে দেওয়ায় পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়াল ৯৮৫ টাকা।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৬০ টাকা, ৫ লিটর বোতল ৭৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। সে সময় পাম তেলের দাম ধরা হয় লিটার ১১৮ টাকা। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময়ও বেঁধে দেওয়া দামে তেল পাওয়া যায়নি। পরে দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট এবং এলসি কমিশন ও মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়। এতেও কাজ হয়নি। বাজারে তেলের দাম কমেনি। তখন সরকার ২০ মার্চ তেলের দাম প্রতি লিটার ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে।
দাম নির্ধারণের পর আবারও সয়াবিনের দাম বাড়ানোর জন্য মাঠে নামেন মিল মালিকরা। তারা ৬ এপ্রিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে একটি বৈঠক করে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। সে সময় তারা বলেছেন-আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। ফলে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সংস্থাটি ওই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গেই নাকচ করে দেয়। অধিদপ্তর বলে, ঈদের পরে এ বিষয়ে আবার বৈঠক হবে। সেখানে এ বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রস্তাব নাকচের পর কারসাজির চক্রে আবার বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। ১৫ রোজার পর মিল থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। এই সুযোগে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও কারসাজি করেন। ঈদের দুদিন আগে থেকে ঈদের দুদিন পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খুচরা বাজারে বোতলজাত তেল পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। আর কয়েকটা দোকানে পাওয়া গেলেও লিটার ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২০।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, `ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি রোধে অধিদপ্তর প্রথম থেকেই মাঠে আছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে খুচরা থেকে শুরু করে পাইকারি ও মিল পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখছে। অনিয়ম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। সামনেও যাতে অনিয়ম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’