৭২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্ম পার করছে ভারত।বেশিরভাগ স্থানে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি। রাজধানী দিল্লিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শহরের বেশিরভাগ অংশে তাপপ্রবাহের কারণে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও। তবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য কয়লা সংকট ও বাড়তি চাহিদাকে দায়ী করেছে কর্তৃপক্ষ। বিহারসহ অনেক এলাকায় তীব্র গরমের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল। এছাড়াও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশটির অনেক অংশে দেখা দিয়েছে পানির অভাব। জুন-জুলাইয়ের আগে যা আরও বাড়বে বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি।
২০১০ সাল থেকে দেশটিতে তাপপ্রবাহে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আরও বাড়তে পারে তাপমাত্রা। গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যেসব এলাকায় প্রচণ্ড দাবদাহ বয়ে যেতে পারে, সেসব এলাকায় আগাম সতর্কবার্তা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থা বিভাগগুলোর সঙ্গে কাজ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দিল্লিসহ গোটা মধ্য ও উত্তর ভারতে ইতিমধ্যে তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। বর্ষার মৌসুম আসতে এখনো দুই মাস বাকি। তাই এর আগে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও ঠান্ডা আবহাওয়ার সম্ভাবনা কম।
মহাপাত্র বলেন, ১৯০১ সালের পর থেকে গত মাসে ভারতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তীব্র বিদ্যুৎ-সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গরমে ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। প্রচণ্ড দাবদাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যু ঠেকাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ুবিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোল বলেন, ‘কেন এ বছর এই অসহ্য গরম? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। আমরা ৭০ বছরের তাপমাত্রা যাচাই করে সেটাই দেখতে পেয়েছি।’
ভারতের রেল মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৬৭০টি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করার কথা ভাবা হয়েছে। সেই জায়গায় চালানো হবে দিনে ৪১৫টি কয়লাবাহী মালগাড়ি। প্রতিটি মালগাড়িতে পাঠানো যাবে তিন হাজার টন কয়লা।
ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয়ের কার্যনির্বাহী পরিচালক গৌরবকৃষ্ণ বনসল জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে দূরপাল্লার যাত্রীদের এ জন্য খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় তাঁদের নেই।
রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঙিন হাল দিল্লির। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয়েছে, রাজধানীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে মাত্র এক দিনের কয়লা মজুত রয়েছে। এখনই সরবরাহ বাড়ানো না হলে মেট্রোরেল, হাসপাতাল, সরকারি অফিসসহ অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ ছাঁটাই অবধারিত। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতকাল টুইট করে বলেন, ‘সারা দেশের অবস্থা খারাপ। এই হাল থেকে বেরোনোর জন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ যাত্রীবাহী রেল বন্ধ করে কয়লাবাহী রেল চলাচল বাড়ানো সেই জরুরি ব্যবস্থারই অঙ্গ।
দিল্লির বিদ্যুৎমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন গতকাল বলেন, সাধারণত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ২১ দিনের কয়লা মজুত থাকে। কিন্তু এই সংকটের কারণে দিল্লিসহ অধিকাংশ রাজ্যে এক থেকে তিন দিনের কয়লা মজুত রয়েছে। কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে তালমিল না থাকাই এই সংকটের কারণ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, এখনই কয়লার জোগান বাড়াতে কেন্দ্রকে যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, কয়লার কারণে রাজ্য সরকারের কোনো দেনা নেই। অথচ চাহিদা অনুযায়ী কয়লা রাজ্য সরকার পাচ্ছে না। সরকারকে কয়লাবাহী রেল বেশি করে চালাতে হবে মজুত সৃষ্টির জন্য। দেশের মোট বিদ্যুতের ৭০ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কয়লার সরবরাহ বাড়াতে অতিরিক্ত এক লাখ ওয়াগন কাজে নামানো হচ্ছে।