ওরা কোনো মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু নয়। তবুও ওদের পায়ে শেকল, কারণ ওরা খেতে চায়।পেটে ওদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা, সেই ক্ষুধা নিবারণের নেই কোনো উপায়। তাই ওদের বেঁধে রাখা হয়েছে, যাতে চুরি করে খেতে না পারে।
ভয়েস: রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার পকিহানা গ্রামের রেলবস্তির পাশে দাঁড়িয়ে দেখলে পটে আঁকা ছবির মতোই মনে হবে শেফালীর কুঁড়ে ঘরটিকে। কিন্তু সেই ছবির আশেপাশে ছড়িয়ে আছে দারিদ্রের অন্ধকার। কুঁড়ে ঘরের উঠোনে হাহাকার তোলে ক্ষুধার্ত ৫টি শিশুর বোবাকান্না, সেই খবর হয়তো অনেকেরই অজানা। প্রতিবেশিদের নালিশ- শেফালীর ২ সন্তান চুরি করে। কিন্তু কেউ তলিয়ে দেখেনি, ক্ষুধার জ্বালায় একটা শিশু যদি কারো একটা পেঁপে কিংবা আম পেড়ে খায় সেটা চুরির পর্যায়ে পড়ে কীনা।
কিন্তু তবুও আসে নালিশ, বসে বিচার। এতো নালিশ কিংবা বিচারে বসার সময় নেই শেফালীর। তাইতো দুই সন্তানের পাায়ে শেকল দিয়ে চলে যান কাজে।
শেফালীর স্বামী আমির হোসেনের পেশা দালালী। হাফ ডজন বিয়ে করেছেন বলে রয়েছে জনশ্রুতি। অন্যান্য স্ত্রীদের সহ মোট সন্তানের সংখ্যা ১৫জন। এরমধ্যে শুধু শেফালীর ঘরেই ৮ সন্তান। এর মধ্যে জমজ দুই ছেলের মৃত্যূ হয় প্রসবের সময় । অভাবের তাড়নায় বিক্রিও করেছেন একটিকে। বাকি ৫ সন্তানের ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে দিশেহারা শেফালী বেগম।
সুমন ও তার ভাই সিমন বন্ধুদের সাথে খেলতে পারে, কিন্তু চাইলেও যেতে পারেনা স্কুলে। কারণ ওদের পেটে যেমন খাবার নেই, পরণেও নেই জামা।
শেফালীর শেকলবন্দী ২ শিশুর ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সবাই জেনেছে ওরা ক্ষুধার্ত। এখন এখানে ভিড় করছেন প্রতিবেশি, পদচারণা নানা সাহায্য সংস্থার। কিন্তু এর আগে কেউ ওদের খোঁজ নেয়নি।
আসন্ন ঈদটা হয়তো মোটামুটি ভালোই যাবে সুমন – সিমনদের। কিন্তু আগের ঈদগুলো যেমন দু:সহ স্মৃতির, তেমনি আগামি ঈদগুলোও অনিশ্চিত। তবে আশার কথা শেফালীর পাাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এবার হয়তো একটা ঘর জুটবে হতদরিদ্র ভূমিহীন শেফালীর। তার সন্তানরা রেহাই পাবে চুরির দায় থেকে।