১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এক ভাই রয়ে যান ভারতে, আরেক ভাই চলে যান পাকিস্তানে।
দীর্ঘ ৭৫ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ মাসের শুরুর দিকে ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা সিক্কা খানের সঙ্গে পরিচয় হয় পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে বসবাসকারী তার ভাই মো. সিদ্দিকের। খবর আনাদোলুর।
এ যেন রূপালী পর্দার আরেক বজরঙ্গি ভাইজান কাহিনী। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানের কারতারপুরে শিখদের মন্দির গুরুদোয়ায় ছোট ভাই সিক্কা খানকে খুঁজে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন বড় ভাই মো. সিদ্দিক।
আবেগঘন এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার ফয়সালাবাদ সফরের জন্য ভারতের বাসিন্দা সিক্কা খানকে শুক্রবার ভিসা দিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে কারতারপুরে শিখদের গুরুদোয়ায় বার্ষিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাহিব করিডোর দিয়ে বিনা ভিসায় ভারতীয় নাগরিকদের আসার ব্যবস্থা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বিনা ভিসায় পাকিস্তান এসে ভাইকে খুঁজে পান সিক্কা খান। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে দিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশন শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ফয়সালাবাদে বসবাসকারী বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে সুযোগ করে দিয়েছেন সিক্কা খানকে ভিসা দিয়ে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারতের লুফিয়ানায় জুগারুন নামে একটি বসবাস করতো সিক্কা খানের পরিবার। ছোট বোন আর বাবাকে বাড়ি রেখে তার মা তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মামার বাড়ি। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে দেখেন তাদের গ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। এ সময় তার বড় ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে তার বাবা পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টকালে নিহত হন।
সিক্কা খানের (ছোটবেলায় নাম ছিল হাবিব) বয়স তখন ছিল আনুমানিক ১০ বছর। তার মা পরে মানসিক যন্ত্রণায় মারা যান।
২০১৯ সালে নাসির দিলন নামে এক ইউটিউবারের পোস্ট করা ভিডিওতে ফয়সালাবাদ থেকে মো. সিদ্দিক তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের সন্ধান চান।
এ ভিডিওটি চোখে পড়ে জাসগির সিং নামে পাঞ্জাবের এক চিকিৎসকের। তিনিই পরে দুই ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন।
এর পর দুই ভাই এ মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের গুরুদোয়ায় এসে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন।
ইউটিউবের কল্যাণে এ ভিডিও মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই পাকিস্তার সরকার ভারতে থাকা সিক্কা খানের জন্য ভিসা ইস্যু করে অনন্য এক নজির সৃষ্টি করলো।