‘গেহরাইয়াঁ’ ছবির চিত্রনাট্য প্রথমে শুনে একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী অনন্যা পান্ডে। চলচ্চিত্রজগতের জনপ্রিয় অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের কন্যা অনন্যা বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কীভাবে এই কঠিন চ্যালেঞ্জ তিনি পার করবেন। এক ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকারের শুরুতে অনন্যা জানান যে পর্দায় ‘টিয়া’ হয়ে ওঠা তাঁর জন্য কতটা কঠিন কাজ ছিল।
আলাপচারিতায় অনন্যা বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমি যত চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র ছিল আমার জন্য। কারণ, “গেহরাইয়াঁ” ছবিতে আমার চরিত্রটি মানসিক দিক থেকে খুবই মুশকিলের। শুরুতে আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে এই চরিত্রের সঙ্গে কীভাবে ন্যায় করব। তবে এই সময় আমার মুশকিল অনেকটা আসান করে দেন শকুন (পরিচালক)। তিনি আমাকে বলেন আমি যেমন, তেমনভাবেই ক্যামেরার সামনে হাজির হতে।
কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনাচিন্তা করা আর চাপ নেওয়া আমার স্বভাবে আছে। তাই শকুন আমাকে বুঝিয়ে বলেন যে ছবিতে কান্না বা আবেগময় দৃশ্যের সময় আমি যেন মানসিকভাবে বেশি চাপ না নিই। তিনি আমাকে শুধু ধারার সঙ্গে বয়ে গিয়ে অভিনয় করার কথা বলেছেন
পর্দায় টিয়া হয়ে ওঠার জন্য অনন্যাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পরিচালকের সঙ্গে নিজের চরিত্র নিয়ে অনেক আলাপ–আলোচনা করেছেন তিনি।
টিয়ার সঙ্গে বাস্তবে নিজের কতটা মিল খুঁজে পান, এমন প্রশ্নের জবাবে অনন্যা বলেন, ‘জানেন, আমি অনেকটা টিয়ার মতোই। টিয়ার মতো আমি ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের গভীরতায় বিশ্বাস করি। তাই আমাকে শকুন বলেন যে শুধু নিজেকে পর্দায় তুলে ধরতে। আর যখন পর্দায় নিজের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, তখন কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।’ ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে ‘গেহরাইয়াঁ’। এই ছবিতে অনন্যা পান্ডে ছাড়াও দীপিকা পাড়ুকোন, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদি, রজত কাপুর, নাসিরুদ্দিন শাহসহ আরও অনেকে আছেন।
ভায়াকম এইটিন স্টুডিও আর ধর্মা প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘গেহরাইয়াঁ’ ছবিটিজুড়ে আছে প্রেম, কামনা, বাসনা, সম্পর্কের গভীরতা আর প্রতারণা।
কথা প্রসঙ্গে অনন্যার কাছে জানতে চাই, আদর্শ সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি। জবাবে তিনি একটু ভেবে বলেন, ‘প্রশ্নটা বেশ ভারী। তবে আমি এর হালকা জবাব দেব। শাহরুখ স্যারের ছবির সেই জনপ্রিয় সংলাপ মনে আছে, “ভালোবাসা হলো বন্ধুত্ব”, আর আমি এতে বিশ্বাসী। আসলে মা–বাবার ২৪ বছরের দাম্পত্য সম্পর্কে আমি এটাই দেখে এসেছি। তাঁদের মধ্যেও নিশ্চয় লড়াই, ঝগড়া হয়। তবে আবার নিজেরাই মিটমাট করে নেন।’
অনন্যা তাঁর জীবনসঙ্গীর মধ্যে বাবার একটা গুণ দেখতে চান। তাঁর জীবনসঙ্গীর প্রসঙ্গ উঠতেই লাজুক হেসে এই তারকাকন্যা বলেন, ‘আমার বাবার হাস্যরস দুর্দান্ত। তিনি সব সময় হাসি, মজা করে মাতিয়ে রাখেন। এমন একটা দিন যায় না যে বাবা আমাকে হাসাননি। আমি চাই যে আমার জীবনসঙ্গীর হাস্যরস যেন বাবার চেয়ে বেশি হয়। আর আমি যেন অকপটে ওকে আমার মনের সব কথা বলতে পারি।’ বাবা, মা, বোন ছাড়া অনন্যার জীবনে আরও অনেক গভীর সম্পর্ক আছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সত্যি ভাগ্যবতী যে এ রকম মা–বাবা পেয়েছি। মা, আর বোন আমার অত্যন্ত কাছের দুই মানুষ। সুহানা খান, সানায়াকে আমি জন্ম থেকে দেখছি। তাদের সঙ্গে আমার বড় হয়ে ওঠা। তাই তাদের সঙ্গেও আমার গভীর সম্পর্ক। যাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে, সব সম্পর্কই গভীর।’ ‘গেহরাইয়াঁ’ ছবির গল্পে সম্পর্কের গভীরতার পাশাপাশি প্রতারণার কথা তুলে ধরা হয়েছে। অনন্যা বলেন, ‘আমি প্রতিটা প্রতারণা থেকে নিজেকে আরও মজবুত করার শিক্ষা পেয়েছি। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু বেশি আবেগপ্রবণ। তাই নিজের যন্ত্রণার ভার নিজে বয়ে বেড়াতাম। এখন আর তা করি না। ভালো-মন্দ দুটিই মুখের ওপর সঙ্গে সঙ্গে বলে দিই। তাই এখন নিজেকে অনেকটা হালকা লাগে। আর মনটাও ফুরফুরে থাকে।’
অতিমারির দেড় বছর কীভাবে কাটালেন, জবাবে অনন্যা বলেন, ‘আসলে মার্চে আমাদের এই ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর তখনই লকডাউন হয়ে গেল। তাই শকুন আর লেখক আয়েশার সঙ্গে এই সময়ে চিত্রনাট্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি। নিজের চরিত্র টিয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আর চুটিয়ে বই পড়েছি।
এ ব্যাপারে বলতে পারেন “ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি” ছবির নয়না তলোয়ারের মতো আমি, যার শুধু বই পড়ার নেশা ছিল। অতিমারির সময় আমি নানান ধরনের বই পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এ ছাড়া বেশ কিছু কালজয়ী ছবি দেখেছি।’ অনন্যা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের বয়স শুধু বলার জন্য চার বছর। কারণ, এর থেকে দুই বছর তো করোনাই কেড়ে নিল। তবে এই দুই বছরের প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে বিশেষ। আগামী দিনে আরও লম্বা ভ্রমণে যেতে যাই।’