জেনে অবাক হবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বাবা কাজ করতেন কারখানায়, আর দাদা ছিলেন একজন বাবুর্চি।
ছোট বেলা থেকেই ছিলেন বদমেজাজি আর মারদাঙ্গা স্বভাবের এই পুতিন। শৈশবে তার সঙ্গে স্থানীয় ছেলেদের শুরু হয় সংঘাত, তাদের মোকাবিলায় রপ্ত করেন জুডো খেলা। এক সময় জুডোতে ব্ল্যাক বেল্টও অর্জন করেন তিনি।
গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হচ্ছেন এই পুতিন। যার পুরো নাম সভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ ও ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন এই পুতিন। এছাড়াও, ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড রাশিয়া দলের সভাপতি এবং রাশিয়া ও বেলারুশের মন্ত্রীসভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৭ মে, ২০১২ তারিখ থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আজ পর্যন্ত।
পুতিনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ই অক্টোবর তৎকালীন লেলিনগ্রাদে। তার শৈশব কেটেছে এক কঠিন পরিবেশে। বর্তমানে সেন্ট পিটসবার্গ, যেটি এক সময় পরিচিত ছিলো লেলিনগ্রাদ নামে।
২০১৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় পুতিনের। তাদের দাম্পত্য জীবনের আয়ু ছিল ৩০ বছর। কাজ পাগল পুতিনকে গুড বাই জানান স্ত্রী লিদমিলা পুতিনা। তার রয়েছে ২ সন্তান । ১জন কাতারিনা, অন্যজন তিখোনোভা।
তার ছোট মেয়ে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রশাসনে উচ্চপদে চাকরি করেন। অন্যদিকে বড় মেয়ে একজন শিক্ষাবিদ। গুজব রয়েছে যে, সাবেক জিমন্যাস্ট আর রাজনৈতিক অ্যালিনা কাবেইভার সঙ্গে রয়েছে গভীর প্রেম।
স্কুলের পড়ালেখা শেষ করার আগেই পুতিনের স্বপ্ন ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে কাজ করার। আইন শাস্ত্র পড়াশুনা করা পুতিন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন। স্নায়ু যুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে কেজিবির গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৭ সালে বরিস ইয়েলেৎসিন যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তখন ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে আসেন এবং তাকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা করা হয়। ১৯৯৯ সালে নতুন বছরের প্রাক্কালে ইয়েলেৎসিন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।
২০০০ সালের মার্চ মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনায়াসে জয়লাভ করেন পুতিন । ২০০৪ সালে তিনি হলেন দ্বিতীয়বারের মতো রাশিয়ার। কিন্তু রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি পরপর তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা । তখন পুতিন প্রেসিডেন্ট পদে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদে। ২০১২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন তৃতীয় বারের মতো।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের বাৎসরিক বেতন এক লাখ ১২ হাজার ডলার। ২০০৭ সালের একটি সিআইএ নথিতে জানা যায়, তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।
২০১৪ সালে বিদ্যুৎ গতিতে অভিযান চালিয়ে ক্রাইমিয়া দখল করে নিল রাশিয়া। এটি ছিল প্রেসিডেন্ট পুতিনের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় বিজয় আর পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এক অবমাননাকর পরাজয়। একটি প্রতিবেশী দেশের একটা অঞ্চল দখল করে নিয়ে রাশিয়া দেখিয়ে দিল তার শক্তি, কিন্তু রাশিয়াকে থামাতে কিছুই করতে পারলো না পশ্চিমারা।
বহু বছর ধরে প্রেসিডেন্ট পুতিন একটা কৌশল নিয়ে আগাচ্ছিলেন, যার লক্ষ্য সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোকে আবার রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসা। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সংঘাতে সেটাই দেখিয়ে দিল রাশিয়া।
অনেকে মনে করেন পুরাতন সোভিয়েত ইউনিয়নকে একত্র করার নীতি নিয়ে এগুচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সাম্প্রতিক ইউক্রেন আক্রমণ সেই পরিকল্পনারই একটা অংশমাত্র। ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে কেন চাইলো, এতে রাশিয়ার নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে- সেই ছুতোয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই ঘোষণা করেছেন ইউক্রেনে রুশ হামলার কথা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলে নিয়েছে রাশিয়া আর একরকম অবরুদ্ধ করেছে রাজধানী কিভকে।
কিভ পতন যেন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, আর সেটা যদি হয় তাহলে ক্রিমিয়ার পর ইউক্রেন হবে পুতিনের পদানত। এরপর পর অন্য রাষ্ট্র দখলে যাবেন পুতিন, নাকি এখানেই থামবে তার জয় রথ, সময়ই বলে দেবে সে কথা। অনেকে বলছেন রাশিয়ার ক্রিমিয়া আক্রমণের মাধ্যমে সূচনা হতে যাচ্ছে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, সে আশঙ্কাটাও উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।