লোকসানের বৃত্তে আটকে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নে দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সরকার।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন প্রকল্পের অনুমোদন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৭ বছরে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে। আর গত চার বছরেই টেলিটক লোকসান করেছে ৯৯৩ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধুমাত্র দুই অর্থবছরেই প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করে টেলিটক।
লোকসানে থাকার পরেও টেলিটকের নতুন প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘একটা প্রসঙ্গ আসছে- প্রায়ই টেলিটকে লোকসান হয় তারপরে দেয়া হচ্ছে কেন? কল্যাণমুখী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্টেটের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের নীতি প্রণীত হয়। ব্যক্তিখাতকে আমরা সহায়তা করবো, সুযোগ দেব। কিন্তু সরকার একদম সব কিছু ছেড়ে দেবে না।’
জনকল্যাণে লস হওয়া সত্ত্বেও বিআরটিসি বাস চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব সময় লস মুখ্য থাকে না।’
টেলিটকে বড় বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টেলিটকে এবার যেটা নেয়া হয়েছে সেটা একটু বেশি। এবার যখন প্রজেক্টটা আসল, থার্ড পার্টি দিয়ে এটাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। টেলিটকে লোকসানের কারণটা হলো- বাকি সব কয়টার রেট কিন্তু ডাবল তবে টেলিটকে কম। সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারকে মাথায় রেখে অনেক লোকসানি প্রতিষ্ঠানও আমাদের চালিয়ে যেতে হয়।’
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, এই প্রকল্প দেখার পরে কারও কারও কাছে মনে হত পারে, প্রকল্প শেষে আমরা ফাইভজি পেয়ে যাব। আসলে তা নয়, আমাদের বিদ্যমান যে অবকাঠামো আছে সেই টুজি, থ্রিজির উন্নয়নে কিছু কাজ করা হবে। আর সামনে যেহেতু ফাইভজিতে যাওয়ার টার্গেট আছে, ফাইভজির প্রস্তুতি হিসেবে আমরা কিছু ইকুইপমেন্ট বসাবো। ঢাকার ২০০ জায়গায় ফাইভজি চালু করার জন্য ভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাব পেয়েছে। সেটা প্রসেস করছি। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা ফাইভজি পাব।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির উদ্যোগ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নিলেও বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ। যা বাস্তবায়নে
প্রায় পুরো অর্থই জোগান দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। মাত্র ৬০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেবে টেলিটক। চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় নতুন তিন হাজার বিটিএস সাইট তৈরি, রুম, টাওয়ার, লক ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও টেলিটকের নিজস্ব ৫০০ টাওয়ার ও দুই হাজার ৫০০ টাওয়ার শেয়ারিং সাইট প্রস্তুত করা হবে। আর সেবা সক্ষমতা বাড়াতে থ্রিজি ও ফোরজির বিদ্যমান দুই হাজার সাইটের যন্ত্রপাতির ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে। ফিক্সড ওয়্যারলেস এক্সেস (এফডব্লিউএ) প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালতে ইন্টারনেট সেবা বাড়াতে পাঁচ হাজার এফডব্লিউএ ডিভাইস স্থাপন করা হবে।