জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার,টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকিসহ ক্ষতিকর সব খেলা ও অ্যাপস আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) হয়তো শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু বিটিআরসির সামর্থ্য আর প্রযুক্তির অগ্রগতি বিবেচনায় বলা যায়, পাবজি বা ফ্রি ফায়ারের মতো গেম বা অ্যাপগুলো বন্ধ করা সহজ নয়।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইট-অ্যাপ বন্ধ করলেও ইন্টারনেট গেমস খেলা বন্ধ রাখা যাবে না। কারণ ভিপিএন ও ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে এসব খেলা চলবেই।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ বন্ধের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাপ ও সাইট বন্ধ করা গেলেও ছেলেমেয়েদের এসব গেম খেলা থেকে দূরে রাখা যাবে না। এটি বন্ধ করার অর্থ হলো-অ্যাপসগুলো বাংলাদেশে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু বর্তমান অনলাইন দুনিয়াতে ভিপিএন আছে, ডার্ক ওয়েব আছে। সেগুলো দিয়েই ছেলেমেয়েরা গেইম খেলার সঙ্গে যুক্ত হবে। তারা খেলা চালিয়ে যাবে। তাছাড়া ভিপিএন অনেক প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে এটি বন্ধ করে দিলে অনলাইন জগত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই এটিকে মাথা ব্যথা বলে মাথা কেটে ফেলার সাথে তুলনা করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
এর আগেও একবার আমরা পাবজি বন্ধ করেছি। কিন্তু তখন সাধারণ ছেলেমেয়েরা না খেললেও পাবজি খেলা বন্ধ হয়নি। ফ্রি-ফায়ার খেলাও বন্ধ হবে না।
প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ অভিভাবকই ডিজিটাল বিষয়ে দক্ষ নন। সেটা না থাকাতেই অনলাইন গেইমে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু কিশোররা। এর সমাধানের জন্য অভিভাবকদের ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজন বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
এ বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র হেড অব আইটি সালাউদ্দীন সেলিম জানান, “টিকটক, লাইকি, বিগোলাইভের মতো অ্যাপগুলো বন্ধ নয়, ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবিধা নিয়ে অনেকেই ক্যারিয়ার গড়েছেন।
তিনি বলেন, “বর্তমানে কয়েক বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে টিকটক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক। “মাত্র গত কয়েক বছরেই দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। তাই বন্ধ না করে পলিসি মেকার ও যারা আইডল কনটেন্ট ক্রিয়েটর তারা উদ্যোগী হয়ে তরুণ সমাজকে ভালো মানের কনটেন্ট তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ফেসবুক স্বীকৃত ডিজিটাল মার্কেটার পলাশ মাহমুদ বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল প্লেগ্রাউন্ড বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয় কিভাবে? এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, কিশোর-তরুণরা গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কিন্ত সাধারণ স্মার্টফোনে অনেক গেম থাকে। ফ্রি ফায়ার বা পাবজি বন্ধ করলেও অন্যান্য গেম তো আপনি বন্ধ করবেন না। তখন এই দুটি বাদ দিয়ে অন্য গেম খেলবে। এছাড়া যারা এই গেম ভালোবাসে তারা ভিপিএন ব্যবহার করবে। তখন সরকারের কিছু করার থাকবে না। এজন্য ফ্রি ফায়ার বা পাবজি বন্ধের মতো অকার্যর সিদ্ধান্ত না বরং বিকল্প ভাবা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ‘সাইবার-৭১’ এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, গেমস বা কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ ব্লক করে কোনও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে ব্লক করলেও বিভিন্নভাবে এসব ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
তবে কিছু ফায়ারওয়াল সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের হাতে সেই প্রযুক্তি নেই বলে জানান জাবের। ফলে অ্যাপ বন্ধ করলেই বাংলাদেশে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি বন্ধ হবে এমন নয়। এজন্য বন্ধ না করে অ্যাপগুলো সঠিক গাইডলাইনের মধ্যে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গেল বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার,টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকিসহ ক্ষতিকর সব খেলা ও অ্যাপস আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার হাইকোর্ট বেঞ্চ লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর সকল গেম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্মে লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভসহ ক্ষতিকর অ্যাপ এবং পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।