‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ ‘গণঅভ্যুত্থান’ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দায়িত্ব বিএনপির নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে দেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আজকে আমাদেরকে অবশ্যই এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে এবং এই স্বৈরাচারী এই হাসিনার সরকারকে পরাজিত করে আমাদেরকে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনার বটমূলে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলি, গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলি। যার মাধ্যমে পরাজিত হবে এই স্বৈরাচারী, একনায়ক কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের সরকার এবং জনগণের বিজয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ইতিহাস হচ্ছে এই দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, ৪৩ বছরের ইতিহাস হচ্ছে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, বিএনপির ইতিহাস হচ্ছে এই দেশে সত্যিকার অর্থে এই রাষ্ট্র ও এই জাতিকে একটা অস্তিত্ব প্রদানের ইতিহাস।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তিনি আমাদের একটা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তীতে তাকে যখন রাষ্ট্র নির্মাণের দায়িত্ব দেয় তখন তিনি আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, জাতিকে নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যে আমরা একটা স্বাধীন জাতি, এই ভূখণ্ডে সেটাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সবচেয়ে বড় অবদান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগ বন্ধুরা সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে বিশোদগার করে, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে খাটো করার চেষ্টা করে, আমাদের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে খাটো করার চেষ্টা করে, বিএনপিকে খাটো করার চেষ্টা করে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যদি নিজেদেরকে একবার জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করে যে, তাদের অবদান কী এদেশের জন্য? তাদের অবদান হচ্ছে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ, তাদের অবস্থান ভারতে পালিয়ে গিয়ে নেতা সাজা, নিজেদের মনে করে যে তারাই এদেশে স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। তাদের অবদান গণতন্ত্রকে করে ধ্বংস করে দিয়ে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার করা, তারা সেদিন দেশকে, জাতিকে, বাংলাদেশের আত্মাকে নিহত করেছিল। আমরা ভুলে যাইনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা…। আওয়ামী লীগের ইতিহাস এদেশের আত্মাকে বিক্রি করবার ইতিহাস, আওয়ামী লীগের ইতিহাস এদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবার ইতিহাস।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ যা শুরু করেছে, কেন করেছে? তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, প্রকৃত ইতিহাস থেকে জনগণকে সরিয়ে দিয়ে তারা মিথ্যা ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য গোয়েবলসীয় কায়দায় শুধু বারবার মিথ্যা বলতেই থাকে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, তিনি এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছেন। তিনি তার কাজের মধ্যদিয়ে, তিনি প্রাণ উৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের কাছে পুরোপুরি প্রথিত হয়ে আছেন। শহীদ জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। এই দেশের ধানক্ষেতে, পথে-প্রান্তরে শহীদ জিয়া আজকে চির জাগ্রত হয়ে আছেন।’
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে সরকার আটক করে রেখেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই নেত্রীও এদেশে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীর পতাকা যেদিন হাতে তুলে নিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পরে সেদিনও অনেক মনে করেছিল যে বিএনপি বোধহয় শেষ, বিএনপি ধ্বংস, আর বিএনপি জেগে উঠবে না।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। নয় বছর তিনি পথে-প্রান্তরে চারণ কবির মতো গান গেয়ে গণতন্ত্রের গান গেয়েছেন, দেশকে মুক্ত করেছেন এবং আজকেও এই গণতন্ত্রের জন্য তার সমস্ত সুখ-আয়েস ত্যাগ করে, আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য কারা অন্তরীণ হয়ে আছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করেছে। সেখান থেকে তিনি চেষ্টা করছেন। আজকে সমাবেশই প্রমাণ করে তার এই চেষ্টা সফল হচ্ছে। ইনশাল্লাহ সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হবে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, মিথ্যাচার করে গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে কোনো লাভ হবে না। আর মানুষের অধিকার দাবিয়ে রেখেও কোনো লাভ হবে না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তারা কলঙ্কিত করেছে, গণতন্ত্রকে তারা হত্যা করেছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আজকে তারা কাজ করছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধাদলের সাদেক আহমেদ খান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আকরামুল হাসান, নিপুণ রায় চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তারুজ্জামান, অঙ্গ সংগঠনের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হেলেন জেরিন খান, শাহ নেসারুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, এসএস জাহাঙ্গীর, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।