সর্বশেষ কবে ঘর ছেড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটাররা? সেই জুনের প্রথম সপ্তাহে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার জন্য ইংল্যান্ড রওয়ানা হয়েছিল বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং। এরপর প্রায় ৫ মাস হতে চললো, ঘরে ফিরতে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
সাউদাম্পটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রায় মাস খানেক অপেক্ষা করতে হয়েছে ইংল্যান্ডে। এরপর স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
যদিও চারটি খেলার পর পঞ্চমটি না খেলেই আরব আমিরাতে চলে এসেছিল ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টটি করোনাভাইরাসের অজুহাতে খেলেনি বিরাট কোহলিরা। সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ থেকে শুরু হয়েছিল আইপিএলের আরব আমিরাত পর্ব।
এর মধ্যে প্রায় পুরো সময়টাই ভারতীয় ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডে ছিলেন বায়ো-বাবলের মধ্যে। সেখান থেকে আরব আমিরাতে এসেও বায়ো-সিকিউরড বাবলের মধ্যে তাকতে হয়েছে কোহলি-রোহিত-বুমরাহদের। প্রায় এক মাসের এই অভিযাত্রা শেষে ভারতীয় ক্রিকেটাররা নেমে পড়লো বিশ্বকাপ অভিযাত্রায়। এখানেও কঠোর বায়ো-বাবল। বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক প্রকার বন্দী থেকেই ক্রিকেট খেলে যেতে হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের।
লম্বা সময় বায়ো-বাবলের অসহনীয় বন্দিত্বের মধ্যে থাকা এবং টানা ক্রিকেট খেলে যাওয়ার পর ভারতীয় দলের হয়েছে শোচনীয় অবস্থা। পাকিস্তানের সঙ্গে ১০ উইকেটে পরাজয়ের পর নিউজিল্যান্ডের কাছেও তারা হারলো ৮ উইকেটে। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাটাররা রানই করতে পারেনি। ১১০ রানে থেমে গেছে কোহলিদের ইনিংস।
এত বাজে পরিস্থিতি এর আগে কখনো হয়নি ভারতের। অধিনায়ক বিরাট কোহলি অকপটে স্বীকার করে গেছেন, সতীর্থদের শরীরি ভাষা ঠিক ছিল না। সাহসের অভাব দেখা গেছে খেলোয়াড়দের মধ্যে। সবাই ক্লান্ত। ঠিক মত পা বাড়াতে পারছে না। ব্যাট হাতে শট খেললে মাঠ পার হচ্ছে না। ফিল্ডিংয়ে আলস্যভাব। বোলিংয়ে বোলারদের রানআপে দেখা যাচ্ছে ক্লান্ত। ক্লান্ত ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ রবি শাস্ত্রিও। ম্যাচ চলাকালীনই তার ঘুমিয়ে পড়ার ছবি এখন ভাইরাল।
ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা এখন আইপিএলকেই দুষছেন বিশ্বকাপে এমন বাজে পারফরম্যান্সের জন্য। আইপিএল না খেলে যদি ক্রিকেটাররা বিশ্রাম পেতেন অন্তত এক মাসের, তাহলে বিশ্বকাপে এমন খারাপ পরিস্থিতি হতো না।
ভারতীয় দলের পেস বোলার জসপ্রিত বুমরাহও এই আইপিএল কিংবা দলকে টানা বায়ো-বাবলের মধ্যে থাকাকেই দুষলেন লজ্জাজনক পরাজয়ের জন্য।
নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মাঝে মাঝে আপনার বিরতির প্রয়োজন হয়। আপনি আপনার পরিবারকে মিস করবেন, এটাই স্বাভাবিক। ছয় মাস ধরে একটানা খেলছেন। তাই মনের উপর কোথাও না কোথাও প্রভাব ফেলবেই।’ বুমরাহ স্বীকার করে যান, এই মুহূর্তে তাদের শরীর ক্লান্ত এবং এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।
নিজেদের এমন পরিণতির জন্য বায়ো-বাবলকেই সরাসরি দায়ী করেছেন বুমরাহ। সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বের জন্যই কী খেলোয়াড়রা এমন ক্লান্ত? আইপিএলের পর বিশ্বকাপের জন্য সময় বের করতে না পারাই কী এর জন্য দায়ী?
জবাবে বুমরাহ বলেন, ‘অবশ্যই। আমাদের তো বিশ্রাম প্রয়োজন। সেটিই তো ঠিকমত পাইনি। যখন আপনি মাঠে থাকেন, তখন এসব নিয়ে ভাবেন না। আপনি অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন না। কে, কখন, কার সাথে খেলবে পুরো প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। এ কারণেই বায়ো-বাবলে থাকা এবং এতদিন আপনার পরিবার থেকে দূরে থাকা, এটি খেলোয়াড়ের মনকে প্রভাবিত করে।’
যদিও তিনি এ ক্ষেত্রে ভারতীয় বোর্ডকে একটু বাঁচাবার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিসিসিআই খেলোয়াড়দের আরামদায়ক রাখার অনেক চেষ্টা করছে। বুমরাহ বলেন, ‘তবে, বিসিসিআই খেলোয়াড়দের আরামদায়ক রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। এ সময়ে আমরা যেভাবে থাকছি তা খুবই কঠিন। মহামারি চলছে। আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি; কিন্তু বায়ো বাবলের ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ প্রভাবিত করে। আপনি একই জিনিস বারবার করেন। এটা এই মত হয়, আপনি এখানে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’