নিজ নাগরিকদের স্বেচ্ছায় ইথিওপিয়া ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইথিওপিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নন-ইমার্জেন্সি সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা স্বেচ্ছায় সে দেশ ত্যাগের অনুমতি পেয়েছেন। দেশটিতে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর ক্রমাগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অগ্রসরের কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশটিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বলে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ইথিওপিয়ায় সহিংসতা বাড়ার পর বুধবার (৩ নভেম্বর) গভীর উদ্বেগের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই ইথিওপিয়ায় মার্কিন দূতাবাস থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসে।
এক বিবৃতিতে দূতাবাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর স্বেচ্ছায় তাদের নন-ইমার্জেন্সি সরকারি কর্মী ও পরিবারের সদস্যদের ইথিওপিয়া ছাড়ার অনুমোদন দিয়েছে। দেশটিতে সশস্ত্র সংঘাত, গৃহযুদ্ধের শঙ্কা ও সরবরাহ সংকটের কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই মুহূর্তে ইথিওপিয়ায় ভ্রমণ করা অনিরাপদ কারণ যেকোনো সময় সংঘাত বাড়তে পারে। এর আগে ইথিওপিয়ার সরকার ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলেও জানানো হয়।
ইথিওপিয়ান সরকারের মুখপাত্র লেজেসে টুলু মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) ইথিওপিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। টাইগ্রের বিদ্রোহীদের আমহারা অঞ্চলের দুটি এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করার পর রাজধানী আদ্দিস আবাবার দিকে অগ্রসর হওয়ার শঙ্কায় এ ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। জনসাধারণকে রাজধানী রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
ছয় মাসের জন্য জরুরি অবস্থা কার্যকর করেছে দেশটির সরকার। ফলে রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সামরিক বাহিনী যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সেসব এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। ঘর থেকে বের হলেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছে দেশটির নাগরিকরা। কথিত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কারো সম্পৃক্ততার সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইথিওপিয়া সরকার এক ঘোষণায় জরুরি অবস্থা জারির কারণ হিসাবে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট ( টিটিএলএফ) গ্রুপের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। উত্তরাঞ্চলীয় তাইগ্রে অঞ্চলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে গত এক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনী।
এদিকে, দেশটির বিচারমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, আমরা এক মহাবিপদের মধ্যে পড়েছি আমাদের সার্বভৌমত্ব ও একতা নিয়ে। আমরা সাধারণ বিচারিক মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলাতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, জরুরি অবস্থা কেউ ভঙ্গ করে যদি সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের আর্থিক, মানসিক বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করে তার জন্য তাকে তিন থেকে ১০ বছর কারাভোগ করতে হবে।
সম্প্রতি তাইগ্রের বিদ্রোহীরা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আমহারা অঞ্চলের দেসি ও কোমবোলচা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় বলে জানা গেছে। তবে সরকারের দাবি সেনাবাহিনী এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রধান শহর দুটিতে। এই শহর দুটি রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে চারশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।