‘ভাই, এখানে এক চাইনিজ এজেন্টের কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) না দিলে বের হতে দেবে না। কাল অনেক মারধর করেছে। ভাই, আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন? একটু চেষ্টা করেন, বের করতে পারেন কি না। যদি পারেন আমার অনেক উপকার হয়।’
অনুসন্ধানে উঠে আসে কম্বোডিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতনের রোমহর্ষক চিত্র।
ভুক্তভোগী ওই যুবকের পাশাপাশি কম্বোডিয়ায় বসবাসরত আরও প্রায় ৩০ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় । তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়ায় এনে বিক্রি করা হয় তাদের। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালালরা। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কেনার পর তাদের ‘দাস’ বানিয়ে রাখে। বাধ্য করা হয় নানা অপকর্ম করতে। তাদের কথামতো সবকিছু করতে হয়। না করলে চলে নির্যাতন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কাজ নিয়ে বৈধভাবে কম্বোডিয়ায় যান কর্মীরা। সেখানে প্রত্যেককে বিমানবন্দরে রিসিভ করেন বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সির লোকেরা। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দেশটির কোনো শহরের হোটেল বা ফ্ল্যাট বাড়িতে। সেসব হোটেল বা বাড়িতে বাংলাদেশি দালালরা থাকেন। সেখানে তাদের কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা যাচাই করা হয়। এর ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করে একেকজন বাংলাদেশিকে বিক্রি করে দেওয়া হয় অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। বিক্রির সময় বাংলাদেশি দালাল এবং ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ‘দাস’ বানানো হয় বাংলাদেশি কর্মীদের।
কম্বোডিয়ায় দাসত্ব থেকে ফেরা বাংলাদেশিদের বক্তব্য ও অনুসন্ধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশিকে কমপক্ষে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেন বাংলাদেশি দালালরা। কোনো কর্মী যদি অনলাইন প্রতারণায় ‘দক্ষতা’দেখান তাহলে তাকে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে আরও বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
নকিব আল নোমান কায়সার (ছদ্মনাম), বাংলাদেশি এ কর্মীকে চার মাস আগে বিক্রি করে দেওয়া হয় চীনা এক প্রতিষ্ঠানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে কম্বোডিয়া এনে প্রতারণা করেন এক বাংলাদেশি। গত চার মাস ধরে আমাকে তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেওয়া হয়। এখন চতুর্থ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। সর্বশেষ আগস্ট মাসে আমাকে আবার বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই চার মাসে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো থাকা-খাওয়া ছাড়া আমাকে কোনো বেতন দেয়নি। কম্পিউটার টাইপিং এবং ইংরেজিতে দক্ষতা থাকায় তারা আমাকে দিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের প্রতারণার কাজ করতে বাধ্য করে।’