আরেফিন সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ থামছে না। বিশেষ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার মানুষ বেশি ভর্তি হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বির) এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পহেলা মার্চ থেকে গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৮৯০ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। অথচ হাসপাতালে বেড আছে মাত্র সাড়ে ৩০০।
সরেজমিনে ঢাকার শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। একদিকে ভ্যাপশা গরম আর অন্যদিকে রোগীদের ভিড়। সব মিলিয়ে যেন ডায়রিয়ার আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে হাসপাতালগুলো।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ভাই মুজহারুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমার ভাইয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। আমরা গতকাল এসেছি সিট তো পাইনি। হাসপাতালের বারান্দায় ময়লার মধ্যে কোন রকম একটু যায়গা পেয়েছি। ডাক্তার কখন আসে আর কখন যায় তার কোন সঠিক সময় নাই। সেলাইন দিয়ে চলে যায়, সেলাইন শেষ হলে ডাক্তার খুঁজে বেড়াতে হয় সুঁইটা বের করার জন্য।
রাজধানীর মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ড. মহিউদ্দিনের সাথে কথা হয় বিডি২৪লাইভ ডটকমের। আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের এখানে খুব বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে না। গত সাত দিনে ৩ থেকে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আমরা ডায়রিয়া মোকাবেলায় সার্বিক দিক থেকে প্রস্তুত রয়েছি। খাবার সেলাইন, ওষুধ, বেড, আইসিইউসহ যাবতীয় পদক্ষেপ রয়েছে আমাদের। আশা রাখি বড় ধরনের কোন অনুবিধের সম্মুখীন হতে হবে না আমাদের।
এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী মাসে (মে) এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। বিশেষ করে ঢাকার যেসব এলাকায় ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই টিকা দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগরের যেসব এলাকায় ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেসব এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই টিকা দেওয়া হবে।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সাইন্টিস্ট ও হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বিডি২৪লাইভকে বলেন, এ বছর অস্বাভাবিক হারে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। ডায়রিয়ার চিকিৎসা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব হাসপাতালেই আছে। স্যালাইন দেওয়া ও খাবার স্যালাইন খেলেই এটা ভালো হয়ে যায়।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমরা এ পর্যন্ত চারটি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। আইসিডিডিআর,বি আমাদের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য হস্তান্তর করেনি। করলে আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখব।
চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দূষিত পানির জন্যই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব থামছে না। রোগীদের ৩০-৪০ শতাংশই পানিশূন্যতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। তারমধ্যে অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক। তবে শিশুর সংখ্যাও কম নয়। গরমে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া অনেকেই অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়েরিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বাইরের কোনো খাবারের পাশাপাশি যেখান-সেখান থেকে পানি খাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এ রকমই একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল; যা একেবারে মহামারীর রূপ ধারণ করে। সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।