একসময় প্রাণ চঞ্চল ছিল মাজার-ই-শরিফের প্রাচীন রাস্তাগুলো। কিন্তু গত শনিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তরাঞ্চলীয় আফগান এই শহরটি যেন ভূতের শহরের পরিণত হয়। খবর সিএনএস নিউজের।
যে রাতে মাজারের পতন হয়, সেদিন বিকেল থেকেই মানুষজন ছোট ছোট ট্রাকে চেপে শহরের প্রাণকেন্দ্রের দিকে পালাতে থাকে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সবাই ভেবেছিল দীর্ঘদিন ধরে তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মাজার-ই-শরিফের সহসা পতন হবে না।
কেউ কেউ তো ভেবেছিল, এই শহরের কখনই পতনই হবে না তালেবানদের হাতে। কেননা ২০০১ সালের শেষদিকে তালেবান শাসন থেকে মুক্ত হওয়া প্রথম শহর ছিল এই মাজার-ই-শরিফ।
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছিলেন অস্ট্রেলিয়ান-আমেরিকান সাংবাদিক হলি ম্যাককে। তিনি মাজার-ই-শরিফে ছিলেন যখন শহরটির পতন হয়। সেই শহরের পতনের সময়কার অভিজ্ঞতা জানান তিনি।
হলি বলেন, আমার হৃদকম্পন হচ্ছিল। বমি বমি একটা ভাব আমাকে ঘিরে ধরে। আমার ফটোগ্রাফার জ্যাক সিমকিন আমি বললাম, চলো আমাদের গেস্ট হাউজে ফিরে যাই। কেমন যেন গা ছমছম করছে।
আমরা দ্রুতগতি আমাদের গেস্ট হাউজে ফিরে যায়। কিছুক্ষণ পর রাতের নীরবতা গুলির শব্দ শুনতে পাই। একটু পর আমার এক আফগান বন্ধু জানায়, সতর্কতা হিসেবে জানালা থেকে দূরে থেকো। দুর্ভাগ্যবশত, মাজারের পতন হয়েছে।
দুই মিনিট পর আমার মোবাইল ফোনে একটি ইমেল আসে। কাবুলে যাওয়ার আমার ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় লেখালেখির কারণে আমার সব সময়ই একটা আগ্রহ ছিল যে, পতন হওয়া কোনও শহরের ভেতরে থাকার অনুভূতি কেমন। তবে আমি কখনও ভাবতে পারিনি, আমাকে এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে মোটরসাইকেল শহরে চলাচলের আওয়াজও। পুরো রাতই আমাদের রুমে আমরা মাথা নিচু করে রেখেছিলাম। মাঝে মধ্যে উঁকি দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করেছি।
পরদিন যখন সকালের আলো ফুটে ওঠে তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, একসময় সেই দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মেছিল, সেই দেশের অস্তিত্ব আর নেই এখন। সূর্যের আলো যখন প্রখর হতে থাকে, শহরটি যেন নতুন একটি যুগের মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। হারিয়ে যেতে থাকে গান এবং গাড়ির শব্দ আর ফোনে জোরে জোরে কথা বলার শব্দ। শহরটিকে ঘিরে ধরে অস্বস্তিকর নীরবতা এবং মোটরসাইকেলের শব্দ।