বিশ্বকাপ এলে দেখা যায় নানান উন্মাদনা। কেউ পতাকার রঙে করে বাড়ির রঙ, কেউ এলাকাজুড়ে পতাকা টাঙিয়ে সামিল হয় সেই উন্মাদনার। কদর বাড়ে প্রিয় দলের জার্সিরও। বাংলাদেশের অলিতে-গলিতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। তেমনই একজন মাগুরার আমজাদ হোসেন (৭০)। তিনি জার্মানি দলের ভক্ত।
জার্মানির এক ওষুধ খেয়ে রোগ ভালো হওয়ার পর থেকে তিনি দেশটির ভক্ত। এ কারণে ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে তিনি পতাকা বানানো শুরু করেন।
ওই বৃদ্ধা মা আর মেয়ের সাপোর্ট পেয়ে জমি বিক্রি করে প্রথমবারের মতো দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জার্মানির পতাকা তৈরি করেন তিনি। সেই থেকে বিশ্বকাপ এলেই পতাকা বড় করতে থাকেন তিনি। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। এবার তিনি আরও দুই কিলোমিটার বেশি পতাকা তৈরি করেছেন। এ নিয়ে তার পতাকার দৈর্ঘ্য মোট সাড়ে সাত কিলোমিটার।
পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক আমজাদ। বড় ছেলে মালয়েশিয়ায় থাকেন। এছাড়া দুই ছেলে চাকরি করেন। অন্য দুই ছেলে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। পাঁচ মেয়ের মধ্যে চারজনের বিয়ে হয়েছে।
শুরুর দিকে পতাকা তৈরি করতে গিয়ে পরিবারের কারও সমর্থন না পেয়ে নাছোড়বান্দা আমজাদ জমি পর্যন্ত বিক্রি করেন। তবে এবার সন্তানরাই তাকে পতাকা তৈরির খরচ দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠে সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকাটি প্রদর্শন করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০০৪-২০০৫ সালে আমার কঠিন এক রোগ হয়। বিভিন্ন ওষুধ খেয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না। তখন মাগুরা শহরের মনোরঞ্জন নামে কবিরাজের পরামর্শে জার্মানির তৈরি হোমিও ওষুধ সেবন করে সুস্থতা লাভ করি। এরপর থেকেই জার্মানির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়।
২০০৬ সালে জার্মানিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে। তখন দেশটিকে একটা উপহার দিতে প্রায় ৩৫০ গজ লম্বা জার্মানির পতাকা তৈরি করি। এরপর ২০১০ সালের বিশ্বকাপের সময় পতাকা হয় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০১৪ সালে সাড়ে তিন কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পতাকার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। এবার কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকা তৈরি করেছি। এবারের দুই কিলোমিটার পতাকা তৈরিতে প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই অর্থ দিয়েছে আমার দুই ছেলে। এখন তারা আমাকে সাপোর্ট করে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে তৎকালীন জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরায় এসে আমজাদের পতাকা উদ্বোধন করেন। ওই সময় তাকে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জার্মান ফুটবল দলের ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ পান তিনি। ২০১৮ সালেও জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসেছিলেন পতাকা প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে।
আমজাদ বলেন, ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে জয় পেয়েছি। আমাকে সম্মাননা দিয়েছে। জার্মান ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ পেয়েছি। তখন অনুপ্রেরণা বেড়ে যায়। আমার মা বাদে পরিবারের সবাই পতাকা তৈরির বিপক্ষে ছিল। কিন্তু আমি সেটা শুনিনি। ২০ শতক জমি বিক্রি করে দিছিলাম। সেবার খরচ হইছিল পাঁচ লাখ। বাড়িতে প্রজেক্টর কিনে নিছিলাম খেলা দেখার জন্য। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গরু দিয়ে মেজবান দিছিলাম।
আমজাদ বলেন, ভালোবাসা থেকেই এগুলো করেছি। আর এটার জন্য কারও কাছে সাহায্যও চাইনি। এবার এই পতাকা জার্মানির দূতাবাসকে উপহার দিয়ে দেব। তারা হয়তো এটা জাদুঘরে সংরক্ষণ করবে।
তিনি বলেন, আমার ভালোবাসার কমতি নেই। কিন্তু প্রতি বিশ্বকাপে জার্মানিকে ভালোবেসে আমি সর্ববৃহৎ পতাকা তৈরি করি। অথচ তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত ভালোবাসা টুকু মেলে না। এবারই শেষবারের মতো পতাকা তৈরি করবো আমি। পরবর্তীতে যদি মনে চায় করতেও পারি। তবে এটা ১৬ আনার মধ্যে ১৪ আনা কনফার্ম যে আমি আর পতাকা তৈরি করবো না।