দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা এবং স্নায়বিক দুর্বলতা কারণে ব্রিটেনের চাকরির বাজার থেকে ঝরে পড়েছেন অন্তত ৬ লাখ কর্মী। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর অফি অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান শ্রমবাজারের ওপর করা সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শতকরা হিসেবে দেশটির শ্রম বাজার থেকে ঝরে গেছেন প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মী।
ব্রিটেনের কর্মক্ষম লোকজনদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক কিংবা স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়া শুরু হয় করোনা মহামারির আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই ধরনের অসুস্থ কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজারের কিছু বেশি; কিন্তু ২০২২ সালের আগস্টে এই সংখ্যা বেড়ে পৌঁছায় ২৫ লাখে।
মহামারির ধাক্কা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যে শুরু হয়েছে মূল্যস্ফীতি। বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি যে স্তরে পৌঁছেছে, তা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ বর্তমানে এই মূল্যস্ফীতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে মোট শ্রমশক্তির এক চতুর্থাংশ আক্ষরিক অর্থেই ‘বসে যাওয়ায়’ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্রিটেনের অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
ওএনএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যারা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের অধিকাংশই লং কোভিডে আক্রান্ত। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ‘কোভিড নেগেটিভ’ সনদ পাওয়ার পরও যারা দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, খুসখুসে কাশি, মাথা ও গা ব্যাথাসহ নানা উপসর্গে ভোগেন, তাদেরকে লং কোভিডে আক্রান্ত রোগী বলা হয়।
লং কোভিডের পাশপাশি স্নায়বিক দুর্বলতাও বেড়েছে যুক্তরাজ্যের কর্মক্ষম লোকজনের মধ্যে। ওএনএসের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ব্রিটেনে স্নায়বিক দুর্বলতায় আক্রান্তের হার বেড়েছে ২২ শতাংশ। এছাড়া বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে কর্মীদের অবসর নেওয়া ও অভিবাসী কর্মীদের ব্রিটেনে আগমনের নিম্নহারও দেশটির শ্রমবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে কর্মসংস্থানের হার পৌঁছেছিল দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু লাখ লাখ কর্মী স্থায়ীভাবে শ্রমবাজার থেকে বিদায় নেওয়ায় উচ্চ কর্মসংস্থান সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সংকট কাটছে না ব্রিটেনের।