দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে এই বিক্ষোভ শুরু হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টিভি।
পাকিস্তান পুলিশের বরাত দিয়ে জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ইসলামাবাদসহ করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, কোয়েটা, পেশোয়ার, মালাকান্দ, রাজনপুর, বাহওয়ালনগর, মুজাফফরগড়, কোহাটসহ ছোট বড় আরও বেশি কিছু শহরে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছে পিটিআই।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে বিক্ষোভকারী জনতা ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘাত ও হয়েছে। জুমার নামাজের পর ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় দুই শহরেই তীব্র যানজট শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করেন। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা।
ইসলাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে বহুসংখ্যক পিটিআই নেতা-কর্মীকে এদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিও টিভি।
এছাড়া পাকিস্তানের পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয়ের বাইরে টায়ার জ্বালানোর পাশাপাশি ভবনে ভাঙচুরের চেষ্টা চালিয়েছেন পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা। সেই সঙ্গে ইসলামাবাদ-লাহোর সংযোগকারী মহাসড়ক দীর্ঘসময় অবরোধ করে রাখা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেছেন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের পিটিআই সদস্য ইজাজ চৌধুরি নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বিক্ষোভে।
সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচিতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিল পিটিআই। বার বার তাদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও দৃশ্যত তারা সেই আহ্বান কানে না তোলায় এক পর্যায়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ, রবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা শুরু করে পুলিশ। এ সময় অন্তত ৩০০ থেকে ৫০০ কর্মী সমর্থককে গ্রেপ্তারও করা হয়।
সিন্ধু প্রাদেশিক পিটিআইয়ের নেতা রাজা আজহার খান জিইও টিভিকে বলেন, ‘হামলা-মামলা দিয়ে আমাদেরকে দলের আদর্শ থেকে টলানো যাবে না।’
এছাড়া পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনওয়ার রাজধানী পেশোয়ার এবং বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে পিটিআই। দলের প্রাদেশিক শাখার নেতারা বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন।
পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবে বিক্ষোভের তেজ ছিল সবচেয়ে বেশি। লাহোর-রাওয়ালপিন্ডি ছাড়াও হায়দারাবাদ, গুজরাট, ভাওয়ালনগর, আলাহাবাদ, জামপুর, রোঝানসহ প্রদেশের ছোট-বড় সব শহরেই ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ করেছে পিটিআই।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছু দিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লিগের শাহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল এই লংমার্চ; তার এক দিন আগে, ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদ শহরে সমাবেশ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইমরান খানকে লক্ষ্য করে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালায় এক হামলাকারী। আরেক হামলাকারী ইমরানের দিকে পিস্তল তাগ গুলি চালিয়েছিল।
পিস্তল দিয়ে যে হামলাকারী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাকে হামলার সময়েই পাকড়াও করেন বছর তিরিশের এক যুবক। তিনি ঠিক সময়ে তৎপর না হলে নিহতও হতে পারতেন পিটিআিই চেয়ারম্যান।
একে ৪৭ অস্ত্রধারী হামলাকারীর বন্দুক থেকে বের হওয়া ৩ থেকে ৪টি গুলি ইমরান খানের পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
বর্তমানে লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।